কাশি কাকে বলে কাশির কারণ কি, এবং কাশির ক্ষতিকর দিক কি কি
কাশি কাকে বলে কাশির কারণ কি, এবং কাশির ক্ষতিকর দিক কি কি
কাশি: হোমিওপ্যাথিক ও অন্যান্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে
কাশি হলো শ্বাসনালী থেকে মিউকাস, জীবাণু বা অন্যান্য অবাঞ্ছিত পদার্থ দূর করার জন্য শরীরের প্রতিক্রিয়া। এটি একটি প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া, যা ফুসফুস ও শ্বাসনালীর সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হোমিওপ্যাথি এবং অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে কাশি বিভিন্ন কারণে হতে পারে এবং এর জন্য বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা রয়েছে।
কাশির কারণসমূহ:
- সংক্রমণ: ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা শ্বাসনালীর সংক্রমণ (যেমন, সর্দি, ফ্লু, ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া)।
- অ্যালার্জি: ধুলা, পরাগ বা পোষা প্রাণীর লোমের মতো অ্যালার্জেনের কারণে।
- পরিবেশগত কারণ: ধোঁয়া, কেমিক্যাল, বা দূষিত বাতাসের সংস্পর্শে আসা।
- অ্যাসিড রিফ্লাক্স: পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীতে উঠে এসে কাশির উদ্রেক করতে পারে।
- ধূমপান: তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে দীর্ঘস্থায়ী কাশি হতে পারে।
- এসমা: শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ ও সংকোচনের কারণে কাশি হয়।
কাশির ক্ষতিকর দিক:
- অনিদ্রা: দীর্ঘস্থায়ী কাশি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
- মাংসপেশীর ব্যথা: প্রচণ্ড কাশির ফলে পেট বা বুকের পেশীগুলোতে ব্যথা হতে পারে।
- বুকের ব্যথা: বেশি কাশির কারণে বুকের মধ্যে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- মাথাব্যথা: কাশির চাপ থেকে মাথাব্যথা হতে পারে।
- বমি বা বমির অনুভূতি: কিছু ক্ষেত্রে বেশি কাশির ফলে বমির অনুভূতি হয়।
- ফুসফুসের ক্ষতি: দীর্ঘস্থায়ী এবং প্রচণ্ড কাশি ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে।
প্রতিকার:
- হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা:
- Aconitum Napellus: শুষ্ক ও আকস্মিক কাশির জন্য ব্যবহৃত হয়।
- Bryonia Alba: কাশি শুষ্ক এবং ব্যথাযুক্ত হলে।
- Drosera Rotundifolia: শুকনো কাশি এবং গলা খুসখুসানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
- Spongia Tosta: যখন কাশি শুষ্ক এবং গলার ভেতরে ঘর্ষণ অনুভূত হয়।
- আধুনিক চিকিৎসা:
- অ্যান্টিহিস্টামিন: অ্যালার্জিজনিত কাশির জন্য।
- কফ সিরাপ: শুষ্ক কাশি কমানোর জন্য।
- ইনহেলার: এসমা বা ব্রঙ্কাইটিসের জন্য।
- অ্যান্টিবায়োটিক: যদি কাশি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণে হয়।
- পর্যাপ্ত পানি পান: শরীরে আর্দ্রতা বজায় রাখতে।
বইয়ের রেফারেন্স:
- “হোমিওপ্যাথি ইন পেডিয়াট্রিকস” – ডাঃ ক্লার্কসন।
- “জেনারেল প্র্যাকটিস গাইড টু রেসপিরেটরি ডিজিজেস” – ডাঃ সমীরণ মিত্র।
৭-৮ মাস বয়সী শিশুদের কাশির কারণ, প্রতিকার, এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস
৭-৮ মাস বয়সী শিশুদের কাশির কারণ, প্রতিকার, এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস
কাশি শিশুদের জন্য একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, ৭-৮ মাস বয়সী শিশুদের কাশির বিভিন্ন কারণ রয়েছে এবং তার চিকিৎসা পদ্ধতিও সঠিকভাবে পালন করতে হয়।
কাশির কারণসমূহ:
- ভাইরাসজনিত সংক্রমণ: যেমন সর্দি বা ফ্লু। শ্বাসনালীতে ভাইরাস আক্রমণ করে এবং এর ফলে কাশি হতে পারে।
- অ্যালার্জি: ধুলা, পরাগ, পশম ইত্যাদি কারণে শিশুদের কাশি হতে পারে।
- শ্বাসনালীর সংক্রমণ (Bronchiolitis): এটি শ্বাসনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং শিশুদের কাশি ও শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে।
- অ্যাসিড রিফ্লাক্স: খাবারের পর পাকস্থলীর অ্যাসিড উঠে এসে কাশির সৃষ্টি করতে পারে।
- ধোঁয়া বা দূষণ: শিশুর সংবেদনশীল শ্বাসনালী দূষিত বায়ুর কারণে কাশি শুরু করতে পারে।
লক্ষণীয় বিষয়সমূহ:
- কাশির ধরন: এটি শুষ্ক না ভেজা, অথবা ক্রমাগত হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।
- শ্বাসকষ্ট: শিশুর কাশি হলে শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে কিনা তা দেখা জরুরি।
- জ্বর: কাশির সাথে জ্বর থাকলে তা চিকিৎসার জন্য ইঙ্গিত হতে পারে।
- শিশুর খাওয়ার ইচ্ছা কমে গেলে।
প্রতিকার:
- হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা:
- Aconite: কাশি যদি হঠাৎ শুরু হয় এবং সর্দির সাথে থাকে।
- Bryonia: যদি কাশি শুষ্ক এবং গলায় ব্যথা থাকে।
- Drosera: যদি গলা খুসখুস এবং ঘন ঘন কাশি হয়।
- Spongia: শুকনো কাশি এবং শ্বাসনালীতে ঘর্ষণ অনুভূত হলে।
- আধুনিক চিকিৎসা:
- সালাইন ড্রপ: নাকে লবণাক্ত দ্রবণ ব্যবহার করে সর্দি পরিষ্কার করা।
- ভাপ নেওয়া: শিশুর ঘরে হালকা গরম ভাপ ব্যবহার করা, যাতে শ্বাসনালী পরিষ্কার থাকে।
- হাইড্রেশন: শিশুকে পর্যাপ্ত তরল যেমন পানি বা বুকের দুধ খাওয়ানো প্রয়োজন।
খাদ্য গ্রহণ ও বর্জন:
- গ্রহণযোগ্য খাদ্য:
- বুকের দুধ: এটি শিশুর জন্য সবচেয়ে পুষ্টিকর এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- ফলের রস: কমলার রস বা অন্য কোনো ফলের রস খাওয়াতে পারেন, যা ভিটামিন সি সরবরাহ করবে।
- ভাতের মাড়: সহজপাচ্য এবং পুষ্টিকর।
- সবজি পিউরি: যেমন, গাজর বা কুমড়ার পিউরি।
- বর্জনীয় খাদ্য:
- দুগ্ধজাত খাদ্য: যেমন গরুর দুধ, যা শ্লেষ্মা বাড়াতে পারে।
- মিষ্টি এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্য: এটি কাশি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- ঠান্ডা খাবার: ঠান্ডা পানীয় বা খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
কাশির কারণে ক্ষতি:
- ফুসফুসের ক্ষতি: দীর্ঘস্থায়ী কাশি ফুসফুসের সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করতে পারে।
- অনিদ্রা: কাশির কারণে শিশুর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
- শ্বাসকষ্ট: অতিরিক্ত কাশি শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে।
- খাবার গ্রহণে অনীহা: কাশি এবং অসুস্থতার কারণে শিশুরা খাবার গ্রহণ করতে চায় না, যা পুষ্টির ঘাটতি ঘটাতে পারে।
বইয়ের রেফারেন্স:
- “হোমিওপ্যাথি ইন চাইল্ড হেলথ” – ডাঃ ডেভিড লিলি।
- “পেডিয়াট্রিক রেসপিরেটরি ডিজিজ গাইড” – ডাঃ প্রতাপ চৌধুরী।

