হাম জ্বর কাকে বলে ওহার কারণ কি ওহার চিকিৎসা ও প্রতিকার
হাম জ্বর (Measles) সম্পর্কে হোমিওপ্যাথিক ও অন্যান্য চিকিৎসা বিজ্ঞান
হাম জ্বর বা Measles হলো একটি অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাসজনিত রোগ যা প্রধানত শিশুরা আক্রান্ত হয়। এটি সাধারণত শ্বাসতন্ত্রে আক্রমণ করে এবং সারা শরীরে লালচে দানা-দানা ফুসকুড়ির মতো চর্মরোগ তৈরি করে। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং হোমিওপ্যাথি উভয় পদ্ধতিতে এর কারণ, প্রতিকার এবং চিকিৎসা আলাদা দৃষ্টিভঙ্গিতে বিবেচনা করা হয়।
হাম জ্বরের কারণ
হাম জ্বরের কারণ হলো Measles virus, যা Paramyxovirus পরিবারের অন্তর্গত। এটি মূলত শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে ছড়ায় এবং দ্রুতই শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে সংক্রমণ করে। হাঁচি, কাশি, বা সংক্রমিত কোনো পৃষ্ঠ স্পর্শের মাধ্যমে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। যেসব শিশু টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আসেনি বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে এই রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে।
হাম জ্বরের উপসর্গ
হাম জ্বরের সাধারণ উপসর্গগুলো হলো:
- হঠাৎ উচ্চমাত্রার জ্বর।
- শরীরের সারা জায়গায় ছোট ছোট লাল ফুসকুড়ি।
- হাঁচি, কাশি এবং নাক দিয়ে পানির মতো তরল বের হওয়া।
- চোখ লাল হওয়া এবং আলোতে অস্বস্তি।
- মুখের ভিতরের কোপলিক স্পট (সাদা দাগ) দেখা দেয়।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞান মতে, রোগীর উপসর্গ অনুযায়ী ওষুধ নির্বাচন করা হয়। হাম জ্বরের ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ ওষুধ হলো:
- Aconite: হাম জ্বরের প্রাথমিক স্তরে, যখন হঠাৎ উচ্চমাত্রার জ্বর হয়, এ ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
- Belladonna: মাথা ব্যথা, তীব্র জ্বর, এবং ত্বকে লালচে দানা দেখা দিলে।
- Pulsatilla: যদি শিশুর কাশি শুকনা হয় এবং রোগীর তৃষ্ণা কম থাকে।
- Euphrasia: চোখ লাল হওয়া এবং চোখে প্রদাহ দেখা দিলে এটি ব্যবহৃত হয়।
- Sulphur: হাম থেকে সেরে ওঠার পরবর্তী ধাপে ত্বকের সমস্যা বা ফুসকুড়ি থেকে রেহাই পেতে এটি ব্যবহৃত হয়।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় মূলত রোগীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা হয় এবং প্রতিটি রোগীকে আলাদা করে মূল্যায়ন করে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
অন্যান্য চিকিৎসা (আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান)
আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান মতে, হাম জ্বরের সরাসরি কোনো চিকিৎসা নেই, তবে উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করা এবং জটিলতা এড়ানোর জন্য কিছু সহায়ক ব্যবস্থা নেওয়া হয়:
- টিকাদান: হাম প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলো টিকা (MMR Vaccine), যা শিশুদের ছোটবেলায় দেওয়া হয়।
- এন্টি-পাইরেটিক ওষুধ: জ্বর নিয়ন্ত্রণে প্যারাসিটামল বা ইবুপ্রোফেন ব্যবহৃত হয়।
- হাইড্রেশন: রোগীর পানিশূন্যতা রোধে প্রচুর পানি পান করা উচিত।
- পুষ্টিকর খাদ্য: রোগীর খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাবার রাখা প্রয়োজন, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
প্রতিরোধ ও যত্ন
হাম জ্বরের প্রতিরোধে সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো:
- টিকাদান: শিশুদের প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপে হাম প্রতিরোধক টিকা (MMR) দেওয়া।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম: রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে, যাতে শরীর স্বাভাবিকভাবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে।
- সংক্রামক রোগীদের থেকে দূরে থাকা: হাম আক্রান্ত রোগীদের কাছ থেকে সুস্থ ব্যক্তিদের দূরে রাখতে হবে, বিশেষ করে শিশুদের।
- স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা: নিয়মিত হাত ধোয়া এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার
হাম জ্বর একটি সাধারণ কিন্তু অত্যন্ত সংক্রামক রোগ। এটি থেকে সুরক্ষা পেতে টিকাদান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। হোমিওপ্যাথিক ও অন্যান্য চিকিৎসাবিজ্ঞানের মধ্যে ভিন্নতা থাকলেও, উভয় পদ্ধতিতেই লক্ষ্য থাকে রোগীর উপসর্গ প্রশমিত করা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী উপযুক্ত চিকিৎসা ও সঠিক যত্ন গ্রহণের মাধ্যমেই হাম জ্বরের জটিলতা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
রেফারেন্স:
- Boericke, W. (1927). Pocket Manual of Homoeopathic Materia Medica. B. Jain Publishers.
- Kumar, V., Abbas, A. K., & Aster, J. C. (2017). Robbins and Cotran Pathologic Basis of Disease. Elsevier.
- Hahnemann, S. (1996). The Chronic Diseases: Their Peculiar Nature and Their Homoeopathic Cure. B. Jain Publishers.