হোমিওপ্যাথিক ও অন্যান্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে কি কারণে মুখের ভিতরে ঘা হয় উহার চিকিৎসা এবং প্রতিকার
মুখের ভিতরে ঘা হওয়া (অ্যাফথাস আলসার বা মুখের আলসার) একটি সাধারণ সমস্যা, যা হোমিওপ্যাথি ও অন্যান্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। এটি সাধারণত মুখের ভিতরের নরম টিস্যুতে হয়ে থাকে এবং বেশ ব্যথাদায়ক হতে পারে। এর বিভিন্ন কারণ, প্রতিকার ও করণীয় সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
মুখের ঘা হওয়ার কারণ
হোমিওপ্যাথিক মতে:
হোমিওপ্যাথি মতে, মুখের ভিতরে ঘা শরীরের ভিতরের ভারসাম্যহীনতার ফল। মুখের ঘা হওয়ার মূল কারণ হতে পারে শরীরের ভিটাল ফোর্স বা প্রাণশক্তির দুর্বলতা। কিছু সাধারণ কারণ:
- অপর্যাপ্ত পুষ্টি: শরীরে আয়রন, ফোলেট বা ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি।
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ: দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ বা উদ্বেগ।
- অ্যালার্জি বা সংক্রমণ: খাদ্য অ্যালার্জি বা মুখের সংক্রমণ।
- বংশগত সমস্যা: পরিবারে পূর্ববর্তী ইতিহাস থাকা।
- পাকস্থলী বা হজমজনিত সমস্যা: এসিডিটি বা হজমের সমস্যা।
অন্যান্য চিকিৎসা মতে:
মুখের ঘা সাধারণত অন্যান্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে নিম্নলিখিত কারণে হতে পারে:
- দাঁত বা মাড়ির ক্ষত: দাঁতের তীক্ষ্ণ প্রান্তের কারণে মাড়ির ক্ষত।
- অপুষ্টি: পর্যাপ্ত ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব।
- অটোইমিউন সমস্যা: শরীরের ইমিউন সিস্টেমের দুর্বলতা।
- ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ: মুখের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণ।
চিকিৎসা এবং প্রতিকার
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা: হোমিওপ্যাথিতে রোগীর সার্বিক অবস্থা বিচার করে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। কিছু সাধারণ হোমিওপ্যাথিক ওষুধ:
- বোরাসিক অ্যাসিড (Borax): ছোট ছোট, ব্যথাযুক্ত ঘা হলে।
- মারক সল (Merc Sol): মুখে ঘা ও মুখের দুর্গন্ধ থাকলে।
- নাট্রাম মিউর (Natrum Muriaticum): বারবার মুখে ঘা হলে, বিশেষ করে মানসিক চাপের কারণে।
- আরসেনিকাম অ্যালবাম (Arsenicum Album): মুখে পুড়নো ধরনের অনুভূতি হলে।
অন্যান্য চিকিৎসা:
- অ্যান্টিসেপ্টিক মাউথওয়াশ: মুখের ভেতরের ব্যাকটেরিয়া দূর করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
- জেল বা ক্রিম: স্থানীয় ভাবে ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে ব্যবহার করা যায়।
- ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্ট: ভিটামিন বি১২, আয়রন এবং ফোলেটের ঘাটতি থাকলে এগুলি পরিপূরক হিসেবে দেওয়া হয়।
- স্টেরয়েড ওষুধ: মুখের ঘা গুরুতর হলে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
করণীয় ও বর্জনীয়
করণীয়:
- পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ: ফল, শাকসবজি ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
- মুখ পরিষ্কার রাখা: নিয়মিত দাঁত ব্রাশ এবং মাউথওয়াশ ব্যবহার।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম: মানসিক চাপ কমানো এবং শারীরিক বিশ্রাম নেওয়া।
- মানসিক চাপ কমানো: নিয়মিত মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম করা।
বর্জনীয়:
- মশলাযুক্ত খাবার: মশলাযুক্ত বা তীব্র খাদ্য গ্রহণ এড়িয়ে চলা।
- ধূমপান ও মদ্যপান: এগুলি মুখের ঘা বাড়িয়ে দিতে পারে।
- অতিরিক্ত টক ও লবণাক্ত খাবার: টক বা অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার মুখের ঘাকে বিরক্ত করতে পারে।
রেফারেন্স বই:
- স্যামুয়েল হ্যানিম্যান – Organon of Medicine
- ড. জর্জ ভিথুলকাস – The Science of Homeopathy
- ড. ফ্রান্সিস ট্রেভেলিয়ান – Clinical Homeopathy
- ড. রবার্ট ডাভিস – Oral Pathology in Modern Medicine
এই বইগুলোতে মুখের ঘা হওয়ার কারণ, চিকিৎসা এবং প্রতিকার সংক্রান্ত ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

