ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর খাদ্য তালিকা বিস্তারিত
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের জন্য সঠিক ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি রোগীর দ্রুত আরোগ্য ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ডেঙ্গু জ্বরের সময় শরীর প্রচুর পরিমাণে পানি হারায় এবং রোগী সাধারণত দুর্বলতা ও ক্লান্তিতে ভুগে থাকেন। তাই সঠিক খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডেঙ্গু রোগীর খাদ্য তালিকা:
১. পানীয় এবং তরলজাতীয় খাবার:
ডেঙ্গু জ্বরের সময় শরীরে ডিহাইড্রেশন (পানিশূন্যতা) এড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত তরল গ্রহণ করা উচিত। রোগীর জন্য নিম্নলিখিত তরল খাবারগুলো উপকারী:
- পানি: ডেঙ্গু রোগীর জন্য সবচেয়ে জরুরি। প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
- নারকেলের পানি: ইলেকট্রোলাইট ও মিনারেলসমৃদ্ধ এই পানীয় শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে।
- তাজা ফলের রস: বিশেষ করে পেঁপের রস, মাল্টার রস, লেবুর শরবত ইত্যাদি রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের পানিশূন্যতা রোধ করে।
- ওরস্যালাইন: ডেঙ্গু জ্বরে শরীর থেকে লবণ ও পানি অনেকটাই কমে যায়। তাই ওরস্যালাইন খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- সুপ বা ঝোল: চিকেন স্যুপ বা হালকা সবজির স্যুপ ডিহাইড্রেশন এড়াতে সহায়ক এবং রোগীর জন্য সহজপাচ্য।
২. ফলমূল:
ডেঙ্গু জ্বরে রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শরীরকে পুষ্ট রাখতে ফলমূল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে:
- পেঁপে: পেঁপের পাতা ও ফল রোগীর রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যা বাড়াতে সহায়ক।
- কমলা ও মাল্টা: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই ফলগুলো ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে এবং শরীরকে দ্রুত আরোগ্য লাভে সহায়তা করে।
- ডালিম (আনার): ডালিমের রসও প্লেটলেট বাড়াতে কার্যকরী হতে পারে।
- কিউই: এটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এবং প্লেটলেটের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- পাকা কলা: সহজপাচ্য এবং শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধারে সহায়ক।
৩. সবজি:
ডেঙ্গু রোগীর খাদ্য তালিকায় হালকা, সহজপাচ্য এবং পুষ্টিকর সবজি থাকা উচিত:
- সেদ্ধ বা হালকা রান্না করা সবজি: গাজর, ব্রকলি, কুমড়া, মিষ্টি আলু ইত্যাদি পুষ্টিগুণে ভরপুর সবজি, যা রোগীকে দ্রুত আরোগ্য লাভে সহায়তা করে।
- সবুজ শাকসবজি: পালং শাক, ধনেপাতা ইত্যাদিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, যা রোগীর ইমিউন সিস্টেমকে মজবুত করে তোলে।
৪. প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার:
ডেঙ্গু রোগীর শরীর শক্তি পুনরুদ্ধারের জন্য প্রোটিন প্রয়োজন:
- মুরগির মাংসের স্যুপ: সহজে হজম হয় এবং শরীরে প্রোটিন সরবরাহ করে।
- ডিমের সাদা অংশ: এটি প্রোটিনসমৃদ্ধ এবং হালকা খাবার হিসেবে গ্রহণ করা যায়।
- মাছ: হালকা গ্রিল করা বা সেদ্ধ মাছ প্রোটিনের একটি ভালো উৎস।
৫. শর্করা ও সহজপাচ্য খাদ্য:
- খিচুড়ি, ওটস বা পুডিং: ডেঙ্গু রোগীর জন্য শর্করা এবং ফাইবারসমৃদ্ধ হালকা খাবার অত্যন্ত উপকারী। এগুলো সহজে হজম হয় এবং শরীরে শক্তি যোগায়।
ডেঙ্গু জ্বরে কী এড়িয়ে চলা উচিত:
- ভাজা ও গুরুপাক খাবার: এগুলো হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
- মশলাদার খাবার: এগুলো পাকস্থলীর প্রদাহ বাড়িয়ে দিতে পারে।
- কফি ও চা: ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়গুলো ডিহাইড্রেশন বাড়াতে পারে।
- অ্যালকোহল: এটি লিভারে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এবং ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়।
বইয়ের রেফারেন্স:
১. Islam, M. A. Nutrition and Health in South Asia. Dhaka: Academic Press, 2017.
২. Alam, Rahim. Diet and Recovery from Tropical Diseases. Kolkata: Health and Wellness Publishers, 2019.
৩. WHO. Dengue: Guidelines for Diagnosis, Treatment, Prevention and Control. World Health Organization, 2009.
এই বইগুলো থেকে ডেঙ্গু রোগীর সঠিক খাদ্য তালিকা এবং পুষ্টির ভূমিকা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।