আমাশয় আক্রান্ত রোগী কোন কোন খাবার গ্রহণ করবে এবং কোন কোন খাবার বর্জন করবে বিস্তারিত আলোচনা
আমাশা (Dysentery) আক্রান্ত রোগীর জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য রোগীর অবস্থার উন্নতি বা অবনতিতে বড় ভূমিকা পালন করে। হোমিওপ্যাথি ও অন্যান্য চিকিৎসা মতে, রোগীর খাদ্যাভ্যাস কী হওয়া উচিত এবং কোন খাবারগুলি এড়িয়ে চলা উচিত তা নিম্নরূপ:
হোমিওপ্যাথিক ও অন্যান্য চিকিৎসা মতে গ্রহণযোগ্য খাবার:
- ফলমূল:
- কলা:আমাশয় আক্রান্ত রোগীর সহজপাচ্য ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ। পেটের গোলযোগ কমাতে সাহায্য করে।
- পাকা পেঁপে: হজমে সহায়তা করে এবং অন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর।
- আপেল (সেদ্ধ বা সস আকারে): আপেলের মধ্যে থাকা পেকটিন মল শক্ত করতে সহায়ক।
- সবজি:
- সেদ্ধ গাজর: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা অন্ত্রের সংক্রমণ রোধে সহায়তা করে।
- সেদ্ধ আলু: কার্বোহাইড্রেটের ভালো উৎস, সহজপাচ্য এবং পেটের জন্য আরামদায়ক।
- হালকা স্যুপ ও শাকসবজি:
- চিকেন স্যুপ: হালকা এবং পুষ্টিকর, তবে অত্যধিক মশলাদার না হওয়াই ভালো।
- সেদ্ধ সবজি: খুব বেশি তেল-মশলা ছাড়া সেদ্ধ করা শাকসবজি অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
- মাড়যুক্ত খাবার:
- ভাতের মাড়: মল শক্ত করতে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের সমস্যা কমায়।
- সেমাই: হালকা এবং সহজপাচ্য।
- পানি ও তরল:
- ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয়: শরীরের জল ও ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখতে সহায়ক।
- ডাবের পানি: প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয়, যা ডিহাইড্রেশন রোধে কার্যকর।
- কুসুম গরম পানি: জলশূন্যতা রোধে এবং পেটের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে কুসুম গরম পানি পান করা যেতে পারে।
বর্জনীয় খাবার:
- দুগ্ধজাত দ্রব্য:
- দুধ ও দুধজাত পণ্য (যেমন: দই, পনির): এগুলো পেটের সমস্যা বাড়াতে পারে, বিশেষ করে ল্যাকটোজ সহ্য করতে না পারলে। তবে সেদ্ধ দুধ কিছু ক্ষেত্রে সহ্য করা যেতে পারে।
- মশলাযুক্ত ও তেলাক্ত খাবার:
- মশলাযুক্ত খাবার: অন্ত্রে প্রদাহ বাড়ায় এবং পেটের অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
- গভীরভাবে ভাজা খাবার: পেটের গ্যাস ও বদহজমের কারণ হতে পারে।
- কাঁচা ফল ও সবজি:
- কাঁচা শাকসবজি: এগুলো কঠিন হজম হতে পারে এবং অন্ত্রের সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- কিছু ফল (যেমন: আঙুর, আনারস): এসিডিক হওয়ার কারণে অন্ত্রের প্রদাহ বাড়াতে পারে।
- প্রক্রিয়াজাত খাবার:
- জাংক ফুড: প্রক্রিয়াজাত এবং সংরক্ষিত খাবার, বিশেষত উচ্চ চিনি ও লবণযুক্ত খাবার, পেটের সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
- ক্যাফেইন ও মদ্যপান:
- চা, কফি, সফট ড্রিঙ্ক:
- আমাশয় আক্রান্ত রোগীর ক্যাফেইন শরীরকে ডিহাইড্রেট করতে পারে, যা পেটের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
- অ্যালকোহল: এটি অন্ত্রের শ্লেষ্মা স্তরকে দুর্বল করে এবং প্রদাহ বাড়ায়।
- মশলাযুক্ত সস ও আচার: অতিরিক্ত ঝাল এবং তেতো সস, আচার আমাশা রোগীর পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে।
রোগীর জন্য খাদ্যাভ্যাসের নির্দেশিকা:
- রোগীর পক্ষে হালকা, সহজপাচ্য, এবং কম মশলাযুক্ত খাবারই সবচেয়ে উপকারী।
- প্রচুর পরিমাণে তরল পান করতে হবে, যাতে ডিহাইড্রেশন রোধ করা যায়।
- অল্প পরিমাণে এবং ঘন ঘন খাবার খাওয়া উচিত, যাতে পেটের উপর চাপ না পড়ে।
বইয়ের রেফারেন্স:
- “বোরিকের হোমিওপ্যাথিক ম্যাটেরিয়া মেডিকা” (Dr. William Boericke): এই বইয়ে বিভিন্ন হোমিওপ্যাথিক ওষুধের সঙ্গে সম্পর্কিত রোগের চিকিৎসার দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়।
- “Principles and Practice of Homeopathy” (David Owen): হোমিওপ্যাথির নীতি ও রোগীর খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।
- “Materia Medica Pura” (Dr. Samuel Hahnemann): হোমিওপ্যাথির প্রাথমিক নীতিগুলোর মধ্যে রোগীর খাদ্যাভ্যাস কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।