জীবনী শক্তি সম্বন্ধে ডাক্তার হ্যানিম্যানের মতামত কি?
জীবনী শক্তি সম্বন্ধে ডাক্তার হ্যানিম্যানের মতামত
হোমিওপ্যাথির প্রতিষ্ঠাতা স্যামুয়েল হ্যানিম্যান তাঁর চিকিৎসা পদ্ধতিতে “জীবনী শক্তি” বা “ভাইটাল ফোর্স” ধারণাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর মতে, জীবনী শক্তি মানব দেহের অভ্যন্তরীণ শক্তি যা দেহের সব কার্যকলাপকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাকে পরিচালিত করে। হ্যানিম্যানের মতে, রোগ হল জীবনী শক্তির বিকৃতি, যা স্বাভাবিক অবস্থা থেকে বিচ্যুত হয়ে শরীরের কার্যকারিতায় বাধা সৃষ্টি করে।
জীবনী শক্তির ভূমিকা
হ্যানিম্যানের মতে, জীবনী শক্তি প্রতিটি জীবের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে উপস্থিত থাকে এবং এই শক্তি দেহের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ভারসাম্য রক্ষা করে। জীবনী শক্তির কাজ হল দেহের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সুস্থ রাখতে এবং যে কোনো রোগ বা আঘাত থেকে শরীরকে সুরক্ষা প্রদান করা। জীবনী শক্তি যখন সঠিকভাবে কাজ করে, তখন দেহ সুস্থ থাকে এবং কোনো রোগের উপসর্গ দেখা দেয় না।
হ্যানিম্যান মনে করেন, বাহ্যিক উপসর্গগুলি রোগ নয় বরং এটি জীবনী শক্তির বিকৃতির ফল। এই বিকৃতি তখনই ঘটে যখন জীবনী শক্তির মধ্যে অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। রোগের বাহ্যিক লক্ষণগুলি জীবনী শক্তির এই অভ্যন্তরীণ বিকৃতির প্রকাশমাত্র।
রোগ ও জীবনী শক্তির বিকৃতি
হ্যানিম্যান তাঁর বিখ্যাত বই অর্গানন অফ মেডিসিন এ উল্লেখ করেছেন, জীবনী শক্তির বিকৃতির কারণেই শরীরে রোগের লক্ষণ দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, কোনো ব্যথা, জ্বর, বা সংক্রমণ হল জীবনী শক্তির সঠিক কার্যকারিতায় ব্যাঘাতের ফলাফল। হ্যানিম্যান মনে করেন, কোনো ব্যক্তি যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন তার জীবনী শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বাহ্যিক উপসর্গের মাধ্যমে এটি প্রকাশ পায়। এই উপসর্গগুলি মূল সমস্যার পরিণাম মাত্র, এবং রোগের প্রকৃত কারণ জীবনী শক্তির অভ্যন্তরীণ অসামঞ্জস্য।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় জীবনী শক্তির ভূমিকা
হ্যানিম্যানের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে রোগের বাহ্যিক লক্ষণগুলোর পরিবর্তে জীবনী শক্তিকে পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে রোগ নিরাময় করা হয়। হোমিওপ্যাথিক ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে জীবনী শক্তির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা হয় এবং শরীরের স্বাভাবিক নিরাময় ক্ষমতা জাগ্রত করা হয়। হ্যানিম্যান বিশ্বাস করেন যে, জীবনী শক্তি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে শরীর নিজেই সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।
উপসংহার
স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের মতে, জীবনী শক্তি মানব শরীরের জীবনীশক্তির মূল চালিকাশক্তি। এই শক্তি দেহের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সুস্থতা রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধ করে। জীবনী শক্তির বিকৃতি হলে রোগের সৃষ্টি হয়, এবং হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই শক্তিকে পুনরায় সক্রিয় করে দেহকে সুস্থ রাখা সম্ভব হয়। হ্যানিম্যানের এই মতবাদ হোমিওপ্যাথির অন্যতম মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।
রেফারেন্স
১. হানিম্যান, স্যামুয়েল. অর্গানন অফ মেডিসিন. ৬ষ্ঠ সংস্করণ, ১৮৪২। ২. বোস, ড. সুশান্ত. হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞান, কলিকাতা: মিত্র প্রকাশনী, ২০১২।