প্রাচীনপন্থী চিকিৎসকগণের কিরূপ কাজকে ডাক্তার হেনিম্যান একদিকে অসঙ্গতি অন্যদিকে তেমন ক্ষতিকর বলেছেন
প্রাচীনপন্থী চিকিৎসকগণের কাজের অসঙ্গতি ও ক্ষতিকর প্রভাব: ডা. হ্যানিম্যানের মতামত
হোমিওপ্যাথির জনক, ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান, প্রাচীনপন্থী চিকিৎসা পদ্ধতির প্রতি তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। তিনি প্রাচীন চিকিৎসকদের কাজকে একদিকে অসঙ্গতিপূর্ণ, অন্যদিকে ক্ষতিকর বলে চিহ্নিত করেন। তার মতে, এই পদ্ধতিগুলো রোগ নিরাময়ের পরিবর্তে রোগীকে আরও দুর্বল করে তোলে এবং জীবনী শক্তিকে নিঃশেষ করে দেয়।
প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতির অসঙ্গতি
হ্যানিম্যানের মতে, প্রাচীন চিকিৎসকরা রোগের বাহ্যিক লক্ষণকে দমন করার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তারা রোগের মূল কারণ খুঁজে বের না করে সরাসরি লক্ষণ দূর করার চেষ্টা করতেন। উদাহরণস্বরূপ, রক্তক্ষরণ, কষ্টদায়ক ব্যথা, বা উচ্চ মাত্রার জ্বর হলে, তারা সরাসরি সেই সমস্যাগুলোকে নিরসন করার জন্য বড়ি বা সিরাপ ব্যবহার করতেন। কিন্তু এর ফলে রোগের মূল কারণ আড়ালে থেকে যায় এবং রোগ আরও জটিল আকার ধারণ করে।
প্রাচীন চিকিৎসকগণ রোগীর শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন না করে সরাসরি বাহ্যিক লক্ষণ কমানোর জন্য রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করতেন। এর ফলে রোগীর জীবনীশক্তি কমে যেত এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ত।
ক্ষতিকর প্রভাব
হ্যানিম্যানের মতে, প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি রোগীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এসব পদ্ধতিতে ব্যবহৃত ওষুধগুলো রোগীর জীবনী শক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করত এবং দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হতো। উদাহরণস্বরূপ, অতিরিক্ত রক্তপাত করানো, কষ্টদায়ক চিকিৎসা পদ্ধতি, এবং উচ্চমাত্রার রাসায়নিক ওষুধের প্রয়োগ রোগীকে দুর্বল করে ফেলত।
হ্যানিম্যান আরও উল্লেখ করেন যে, প্রাচীনপন্থী চিকিৎসা পদ্ধতির একটি বড় সমস্যা হলো তা নিরাময়ের চেয়ে রোগকে দমন করে। এর ফলে রোগ পুনরায় ফিরে আসার আশঙ্কা থেকে যায় এবং রোগের প্রকৃতি আরও কঠিন ও জটিল হয়ে ওঠে। এই পদ্ধতিতে প্রায়শই রোগের লক্ষণগুলি আবার নতুন রূপে ফিরে আসে এবং রোগীর অবস্থার আরও অবনতি ঘটে।
হ্যানিম্যানের সমাধান
হ্যানিম্যান তার অর্গানন অফ মেডিসিন গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, রোগের মূল কারণ খুঁজে বের করে তা নিরাময় করা উচিত। বাহ্যিক লক্ষণ দমন না করে, জীবনীশক্তির পুনর্জাগরণ এবং সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োগ রোগীর আরোগ্য নিশ্চিত করতে পারে। তার মতে, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হলো রোগীর জীবনীশক্তিকে পুনরুদ্ধার করা এবং রোগের মূল কারণ নিরাময় করা।
হ্যানিম্যান আরও বলেন যে, প্রাচীনপন্থী চিকিৎসা পদ্ধতি শুধুমাত্র বাহ্যিক লক্ষণ দমন করে রোগের প্রকৃত আরোগ্য নিশ্চিত করতে পারে না। হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতিতে রোগীর সম্পূর্ণ লক্ষণগুলি বিবেচনা করে সঠিক ঔষধ নির্বাচন করা হয়, যা রোগের মূল কারণকে দূর করতে সহায়ক হয়।
উপসংহার
প্রাচীনপন্থী চিকিৎসকগণের কাজকে হ্যানিম্যান একদিকে অসঙ্গতিপূর্ণ, অন্যদিকে ক্ষতিকর বলেছেন, কারণ তারা রোগের বাহ্যিক লক্ষণগুলোকে দমন করে এবং রোগীর জীবনীশক্তিকে দুর্বল করে। হোমিওপ্যাথি এই পদ্ধতির বিকল্প হিসেবে রোগের মূল কারণ নির্ণয় করে জীবনীশক্তির পুনর্গঠনের মাধ্যমে রোগ নিরাময় করে।
রেফারেন্স:
১. হানিম্যান, স্যামুয়েল. অর্গানন অফ মেডিসিন, ৬ষ্ঠ সংস্করণ, ১৮৪২।
২. শর্মা, ড. এস. কে. হোমিওপ্যাথির ইতিহাস ও তত্ত্ব, কলকাতা: বিজ্ঞান প্রকাশনী, ২০১৮।