Best Homeopathic Treatment

রোগীলিপি সংগ্রহে চিকিৎসকের তৃতীয় কর্তব্য কি

রোগীলিপি

রোগীলিপি সংগ্রহে চিকিৎসকের তৃতীয় কর্তব্য কি

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শাস্ত্রে রোগীলিপি (case-taking) হলো রোগীর রোগের নিখুঁত এবং বিস্তারিত বিবরণ সংগ্রহের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এটি সঠিক ওষুধ নির্বাচন এবং নির্দিষ্ট চিকিৎসার পথে পরিচালিত হওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্যামুয়েল হ্যানিম্যান (Samuel Hahnemann) এর রচিত Organon of Medicine বইয়ের উপর ভিত্তি করে, রোগীলিপি সংগ্রহের বিভিন্ন ধাপ রয়েছে, যা একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসককে রোগীর সম্পূর্ণ অবস্থার ধারণা দিতে সহায়তা করে।

তৃতীয় কর্তব্য: রোগীর মানসিক এবং শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন

রোগীলিপি সংগ্রহে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের তৃতীয় কর্তব্য হলো রোগীর মানসিক এবং শারীরিক অবস্থার সমন্বিত মূল্যায়ন করা। হ্যানিম্যানের তত্ত্ব অনুযায়ী, শুধুমাত্র শারীরিক উপসর্গ বিবেচনা করলে রোগ নিরাময় সম্ভব নয়। রোগীর মানসিক ও শারীরিক উভয় দিকের গভীর মূল্যায়নই রোগের মূল কারণ এবং প্রকৃতি চিহ্নিত করতে সহায়তা করে।

১. রোগীর মানসিক অবস্থা

রোগীর মানসিক অবস্থা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একজন হোমিওপ্যাথ রোগীর আবেগ, মনোভাব, হতাশা, উদ্বেগ, ভয়, রাগ, দুঃখ ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে। রোগীর বর্তমান মানসিক অবস্থার পাশাপাশি অতীতেও মানসিক সমস্যার ইতিহাস থাকলে, সেটিও বিবেচনায় আনা হয়।

যেমন, রোগী কি রাগান্বিত হয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া দেখায়, নাকি ভয় পেয়ে চুপ করে থাকে? এরকম ব্যক্তিত্বগত বৈশিষ্ট্য রোগ নির্ণয়ের প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ, হ্যানিম্যানের মতে, মন এবং শরীর পরস্পর সম্পর্কযুক্ত, এবং মানসিক দুশ্চিন্তা শারীরিক অসুস্থতার প্রতিফলন হতে পারে।

২. রোগীর শারীরিক অবস্থা

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক রোগীর শারীরিক উপসর্গগুলোও নিখুঁতভাবে পর্যালোচনা করেন। কোন সময়ে কোন উপসর্গগুলি বৃদ্ধি পায়, কি অবস্থায় কমে যায়, এবং খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রার ধরন, ঘুম, মলের সমস্যা ইত্যাদি বিষয়ে খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করা হয়।

উদাহরণস্বরূপ, রোগীর ঘুমের ধরণ, খাদ্যাভ্যাস, ব্যথার প্রকৃতি, কাশির তীব্রতা, তাপমাত্রার প্রতি সংবেদনশীলতা ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে চিকিৎসক রোগের প্রকৃতি এবং তার উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করেন। এই সকল বৈশিষ্ট্য একজন চিকিৎসককে রোগীর পুরোপুরি মূল্যায়ন করতে সহায়তা করে।

৩. রোগীর পূর্ণাঙ্গ চিত্রায়ন

রোগীর মানসিক এবং শারীরিক অবস্থার বিশ্লেষণের পর, চিকিৎসক রোগীর একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্রায়ন করেন। এই চিত্রায়নের মাধ্যমে রোগের মূল কারণ এবং তার প্রতিকার নির্ধারণ করা হয়। হ্যানিম্যানের Organon of Medicine বইয়ের ৫ম ও ৬ষ্ঠ সংস্করণে এই বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

হ্যানিম্যানের মতে, সঠিক রোগীলিপি সংগ্রহের মাধ্যমে রোগীর সঠিক চিকিৎসা নির্ধারণ করা সম্ভব। এটি একটি ব্যক্তিগতকৃত চিকিৎসার ভিত্তি তৈরি করে, যেখানে রোগীর শারীরিক ও মানসিক সমস্ত উপাদান বিবেচনায় নেওয়া হয়।

বই রেফারেন্স

  • Hahnemann, Samuel. Organon of Medicine, 6th Edition. Jain Publishing, 1982.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *