Best Homeopathic Treatment

শরীরের বহির্ভাগে একটি স্থানীয় রোগ সৃষ্টি করার অভিসন্ধি জীবনী শক্তি গ্রহণ করে ইহার ব্যাখ্যা

শরীরের বহির্ভাগে একটি স্থানীয় রোগ সৃষ্টি

শরীরের বহির্ভাগে একটি স্থানীয় রোগ সৃষ্টি করার অভিসন্ধি জীবনী শক্তি গ্রহণ করে ইহার ব্যাখ্যা

হোমিওপ্যাথিক নিয়ম অনুযায়ী শরীরের বহির্ভাগে স্থানীয় রোগ সৃষ্টি ও জীবনীশক্তির সম্পর্ক

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় শরীরের বাহিরে স্থানীয় রোগ সৃষ্টির প্রক্রিয়াটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই ধারণাটি মূলত ড. স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের Organon of Medicine বইয়ের ৬ষ্ঠ সংস্করণে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। হ্যানিম্যানের মতে, শরীরের অভ্যন্তরে গভীরতর একটি রোগ বা অস্বাভাবিক অবস্থা থাকলে তা প্রায়ই বাহিরে একটি স্থানীয় রোগের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এটি মূলত জীবনীশক্তির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসাবে কাজ করে।

১. স্থানীয় রোগ সৃষ্টির অভিসন্ধি

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা অনুযায়ী, শরীরের জীবনীশক্তি (Vital Force) হল শরীরের রোগ প্রতিরোধের প্রাথমিক শক্তি। এই জীবনীশক্তি শরীরের সামগ্রিক ভারসাম্য রক্ষা করে। যখন কোনো অভ্যন্তরীণ রোগ জীবনীশক্তির ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে, তখন জীবনীশক্তি চেষ্টা করে সেই সমস্যাকে শরীরের বহির্ভাগে স্থানান্তর করতে, যা আমরা স্থানীয় রোগের মাধ্যমে দেখতে পাই। এই স্থানীয় রোগগুলিকে বলা হয় ‘Expressed Symptoms’ বা বাহিরে প্রকাশিত লক্ষণ।

উদাহরণস্বরূপ, যদি কারো লিভারে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা থাকে, তবে জীবনীশক্তি সেই সমস্যার অভ্যন্তরীণ ক্ষতি থেকে শরীরকে বাঁচানোর জন্য চামড়ায় ফুসকুড়ি বা অন্যান্য চর্মরোগ সৃষ্টি করতে পারে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, রোগের গভীর প্রভাব কমিয়ে, শরীরের বাহিরের অংশে সাময়িকভাবে সমস্যাটি স্থানান্তর করা হয়।

২. স্থানীয় রোগ এবং জীবনীশক্তির সম্পর্ক

হ্যানিম্যান তার বইয়ের ৭৩ থেকে ৭৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বলেছেন, জীবনীশক্তি সর্বদা শরীরকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করে। এই কারণে যখন অভ্যন্তরীণ কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তখন তা জীবনীশক্তিকে দুর্বল করে দেয়। ফলে জীবনীশক্তি সেই সমস্যা থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য একটি বাহিরের লক্ষণ তৈরি করে, যা শরীরের বাহিরে দেখা যায়।

এই ধারণার উপর ভিত্তি করে, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা স্থানীয় রোগগুলিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেন। তারা মনে করেন, এই বাহিরের লক্ষণগুলো শুধু শরীরের সমস্যা নয়, বরং শরীরের অভ্যন্তরীণ সমস্যার প্রতিফলন। তাই, শুধুমাত্র স্থানীয় লক্ষণ দূর না করে পুরো শরীরের সমস্যার সমাধান করা উচিত।

৩. স্থানীয় রোগের উদাহরণ

বিভিন্ন চর্মরোগ যেমন একজিমা, ফোড়া, বা ব্রণের মতো সমস্যাগুলোকে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় শরীরের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্যহীনতার বাহিরে প্রকাশিত লক্ষণ হিসেবে দেখা হয়। এই লক্ষণগুলো দূর করা মানে শুধু বাহ্যিক সমস্যার সমাধান নয়, বরং অভ্যন্তরীণ কারণটি খুঁজে বের করে চিকিৎসা করা হয়। এতে করে জীবনীশক্তির ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয় এবং রোগ দীর্ঘস্থায়ীভাবে সেরে যায়।

৪. সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে জীবনীশক্তির পুনরুদ্ধার

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে রোগীর শরীর, মন ও জীবনীশক্তির সমন্বয় করা হয়। যখন একটি ঔষধ সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হয়, তখন সেটি জীবনীশক্তিকে উদ্দীপিত করে, ফলে শরীর তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে শুরু করে। এতে করে বাহিরের লক্ষণ ধীরে ধীরে কমে যায় এবং রোগ পুরোপুরি সেরে ওঠে।

রেফারেন্স

  1. Organon of Medicine – Dr. Samuel Hahnemann, 6th Edition, Aphorism 73-77, যেখানে স্থানীয় রোগ এবং জীবনীশক্তির সম্পর্ক ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
  2. Lectures on Homeopathic Philosophy – Dr. J.T. Kent, যেখানে হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতিতে রোগীর মানসিক ও শারীরিক অবস্থার সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *