হাঁপানি কাকে বলে হাঁপানির কারণ কি ওহার প্রতিকার এবং চিকিৎসা
হাঁপানি (Asthma) হোমিওপ্যাথিক ও অন্যান্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে
হাঁপানি কী:
হাঁপানি বা অ্যাজমা একটি দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগ, যা শ্বাসনালীর প্রদাহ ও সংকোচনের কারণে ঘটে। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, কাশি, বুকে চাপ এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। হাঁপানি সাধারণত এলার্জি, ধূলাবালি, ঠান্ডা বা শারীরিক পরিশ্রমের ফলে উদ্দীপিত হয়।
হোমিওপ্যাথিক দৃষ্টিকোণ:
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা অনুযায়ী, হাঁপানি শরীরের “ভাইটাল ফোর্স” বা জীবনীশক্তির বিকৃতির ফলে ঘটে। হোমিওপ্যাথি বিশ্বাস করে যে, এটি শুধুমাত্র শ্বাসযন্ত্রের রোগ নয় বরং শরীরের অভ্যন্তরীণ শক্তির অসমতার কারণে হয়। সঠিকভাবে নির্বাচিত ঔষধ রোগীর উপসর্গ ও শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়, যা তার জীবনীশক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে।
হাঁপানির কারণসমূহ:
- এলার্জি: ধুলা, পরাগরেণু, প্রাণীর লোম ইত্যাদির কারণে শ্বাসনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়।
- পরিবেশগত কারণ: দূষণ, ধোঁয়া বা রাসায়নিক গ্যাস শ্বাসনালীতে উত্তেজনা সৃষ্টি করে হাঁপানির আক্রমণ ঘটাতে পারে।
- পরিবারিক ইতিহাস: হাঁপানির পারিবারিক ইতিহাস থাকলে এটি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- সর্দি-কাশি বা সংক্রমণ: ভাইরাসজনিত সর্দি বা কাশি হাঁপানি উদ্দীপিত করতে পারে।
- মানসিক চাপ ও উত্তেজনা: মানসিক অবস্থা শ্বাসপ্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণে প্রভাব ফেলে।
হাঁপানির লক্ষণসমূহ:
- শ্বাস নিতে কষ্ট
- বুকে চাপ অনুভব করা
- ঘন ঘন কাশি, বিশেষত রাতের বেলা
- শ্বাসের সময় শো শো শব্দ হওয়া
প্রতিকার:
- এলার্জি নিয়ন্ত্রণ: বাড়ির ধুলাবালি, প্রাণীর লোম এবং ধোঁয়া থেকে দূরে থাকা।
- পরিষ্কার বাতাস: হাঁপানি আক্রান্তদের পরিস্কার ও দূষণমুক্ত পরিবেশে থাকা উচিত।
- সঠিক খাদ্যাভ্যাস: খাবারের সাথে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা থাকলে তা পরিহার করা।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা:
- Arsenicum Album: হাঁপানি এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকলে এটি ব্যবহৃত হয়।
- Spongia Tosta: শুষ্ক কাশি ও শ্বাসের সময় শো শো শব্দ হলে।
- Antimonium Tartaricum: শ্বাস নিতে কষ্ট ও বুকে শ্লেষ্মা জমলে।
- Nux Vomica: ঠান্ডা থেকে উদ্ভূত হাঁপানি এবং শ্বাসকষ্টে কার্যকর।
চিকিৎসার গুরুত্ব:
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যক্তি বিশেষের উপসর্গের উপর নির্ভর করে। এটি হাঁপানির মূল কারণ নিরাময়ে সহায়ক হয়, তাই রোগীর সম্পূর্ণ ইতিহাস জানা জরুরি। অন্যদিকে, আধুনিক চিকিৎসা শ্বাসনালীকে প্রসারিত করতে ইনহেলার ও ব্রঙ্কোডাইলেটর ব্যবহার করে, যা তাত্ক্ষণিক উপশম দেয়।
অন্যান্য চিকিৎসা:
আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে হাঁপানির চিকিৎসায় ইনহেলার, ব্রঙ্কোডাইলেটর এবং স্টেরয়েড ব্যবহৃত হয়। শ্বাসনালীর সংকোচন দূর করে এবং প্রদাহ কমায়, ফলে রোগী সহজে শ্বাস নিতে পারে।
উপসংহার:
হাঁপানি একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, তবে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। হোমিওপ্যাথি এবং আধুনিক চিকিৎসা উভয় ক্ষেত্রেই লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। তবে রোগীকে নিয়মিতভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বই রেফারেন্স:
- Hahnemann, Samuel. The Organon of the Medical Art.
- Allen, H.C. Keynotes and Characteristics with Comparisons of Some of the Leading Remedies.
- Boericke, William. Pocket Manual of Homoeopathic Materia Medica.