শিশুরোগ কাকে বলে উহার কারণ কি উহার প্রতিকার ও চিকিৎসা
শিশুরোগ: কারণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা
শিশুরোগ বলতে শিশুদের এমন রোগগুলো বোঝানো হয়, যেগুলো সাধারণত তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে ঘটে। হোমিওপ্যাথি ও অন্যান্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে শিশুদের রোগ নির্ণয় ও প্রতিকারের পদ্ধতিতে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে, তবে প্রাথমিক কারণগুলো এবং প্রতিকার প্রায় একই রকম।
শিশুরোগের কারণ:
- জীবাণু সংক্রমণ (Infections): ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস বা পরজীবী সংক্রমণের ফলে শিশুদের বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ডায়রিয়া।
- অপুষ্টি (Malnutrition): শিশুর খাদ্যতালিকায় পুষ্টির অভাব থাকলে তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়, ফলে শিশু নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
- অপর্যাপ্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা: শিশুরা জন্মের সময় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে গড়ে তোলেনি, তাই তারা বিভিন্ন সংক্রামক রোগে বেশি সংবেদনশীল হয়।
- জেনেটিক বা বংশগত সমস্যা: কিছু শিশু বংশগতভাবে নির্দিষ্ট রোগের ঝুঁকি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, যেমন: থ্যালাসেমিয়া, সিস্টিক ফাইব্রোসিস ইত্যাদি।
- পরিবেশগত কারণ: শিশুদের অসুস্থতার একটি বড় কারণ হলো তাদের আশেপাশের পরিবেশ। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, দূষণ এবং সঠিক স্বাস্থ্যবিধির অভাব শিশুরোগের কারণ হতে পারে।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা অনুযায়ী শিশুরোগের প্রতিকার:
হোমিওপ্যাথি শিশুদের রোগের মূল কারণ শনাক্ত করে তাদের পুরো শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা প্রদান করে। এখানে কয়েকটি সাধারণ হোমিওপ্যাথিক ঔষধের উদাহরণ:
- আকনাইট (Aconite): সংক্রমণ বা জ্বরের প্রাথমিক অবস্থায় ব্যবহার করা হয়।
- বেলেডোনা (Belladonna): উচ্চ জ্বর, মাথা ব্যথা এবং গলা ব্যথার জন্য কার্যকর।
- পালসেটিলা (Pulsatilla): বদহজম, সর্দি এবং আবেগজনিত অস্থিরতার জন্য উপকারী।
আধুনিক চিকিৎসা অনুযায়ী প্রতিকার:
- টিকাদান: শিশুদের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের জন্য টিকাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন: পোলিও, হেপাটাইটিস-বি, এমএমআর (হাম, মাম্পস, রুবেলা)।
- পুষ্টিকর খাদ্য: শিশুর সুষম খাদ্য প্রয়োজন, যাতে ভিটামিন, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে। এতে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- অ্যান্টিবায়োটিক ও সংক্রমণ প্রতিরোধক: যখন শিশুরা সংক্রমণে আক্রান্ত হয়, তখন অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্যান্য ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও সঠিক পরিচর্যা: শিশুর সঠিক পরিমাণে বিশ্রাম এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুরোগের ক্ষতি:
- বিকাশগত সমস্যা: যদি শিশুরোগ সঠিকভাবে চিকিৎসা না করা হয়, তবে শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
- মৃত্যুর ঝুঁকি: কিছু গুরুতর শিশুরোগ, যেমন: নিউমোনিয়া বা ডায়রিয়া, সময়মতো চিকিৎসা না পেলে শিশুর মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
রেফারেন্স:
- Clarke, J. H. (1989). “A Dictionary of Practical Materia Medica.” B. Jain Publishers Pvt Ltd.
- Allen, H. C. (2002). “Allen’s Keynotes Rearranged and Classified.” B. Jain Publishers Pvt Ltd.
- Agrawal, M. (2021). “Textbook of Pediatrics.” Elsevier India.