অপরিমিত মাত্রায় ঔষধ পুনঃপ্রয়োগের কুফল
হোমিওপ্যাথিক নিয়ম অনুযায়ী অপরিমিত মাত্রায় ঔষধ পুনঃপ্রয়োগের কুফল
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে ঔষধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মাত্রার বাইরে ঔষধ পুনঃপ্রয়োগের অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে। ডা. স্যামুয়েল হ্যানেম্যান তার Organon of Medicine গ্রন্থে এই বিষয়টি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন এবং ঔষধ প্রয়োগের নিয়মাবলী সুনির্দিষ্ট করেছেন। হোমিওপ্যাথির মূল উদ্দেশ্য হলো স্বল্পমাত্রায় রোগীর শরীরে প্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করা, যাতে শরীর নিজে থেকে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। অপরিমিত মাত্রায় ঔষধ পুনঃপ্রয়োগ করলে রোগীর শরীরে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে এবং কখনো কখনো ঔষধের প্রতিক্রিয়া মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
অপরিমিত ঔষধ পুনঃপ্রয়োগের কুফল:
১. ঔষধের প্রতিক্রিয়া শক্তিশালী হয়ে ওঠা: হোমিওপ্যাথিক ঔষধ অত্যন্ত শক্তিশালী, যা সামান্য মাত্রায় প্রয়োগ করা হয়। ডা. হ্যানেম্যানের মতে, অতিরিক্ত বা অপরিমিত মাত্রায় পুনঃপ্রয়োগ করলে ঔষধের প্রভাব অতিরিক্ত হতে পারে, যা রোগীর শরীরে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এর ফলে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে এবং নতুন লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
২. প্রয়োজনীয় লক্ষণের বিলোপ: একটি মাত্রায় সঠিক ঔষধ প্রয়োগের ফলে রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে। কিন্তু যদি সেই ঔষধ অতিরিক্ত মাত্রায় পুনরায় প্রয়োগ করা হয়, তাহলে রোগীর স্বাভাবিক লক্ষণগুলো দূর হয়ে যেতে পারে এবং এটি চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। হোমিওপ্যাথি অনুসারে, লক্ষণগুলির ধীরে ধীরে পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা অতিরিক্ত প্রয়োগের ফলে অসম্ভব হয়ে পড়ে।
৩. ঔষধের প্রতি শরীরের অতিসংবেদনশীলতা সৃষ্টি: অতিরিক্ত মাত্রায় ঔষধ পুনঃপ্রয়োগ করলে রোগীর শরীর ঔষধের প্রতি অতিসংবেদনশীল হয়ে উঠতে পারে। ফলে ঔষধের কার্যকারিতা কমে যায় এবং ভবিষ্যতে একই ঔষধের প্রয়োগে রোগীর শরীর সঠিকভাবে সাড়া দেয় না। হ্যানেম্যানের মতে, এটি রোগীর স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
৪. ঔষধ-প্রসূত রোগের সৃষ্টি: হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় ঔষধ-প্রসূত রোগ (medicine-induced diseases) একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে। হ্যানেম্যান তার Organon of Medicine-এ উল্লেখ করেছেন যে, অতিরিক্ত ঔষধ প্রয়োগের ফলে শরীরে নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা আগের রোগের থেকে ভিন্ন। এতে রোগীর সুস্থতা বিপর্যস্ত হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
৫. রোগের অবনতি ঘটানো: অপরিমিত মাত্রায় ঔষধ পুনঃপ্রয়োগের ফলে রোগীর প্রকৃত অবস্থার অবনতি হতে পারে। এতে শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায় এবং রোগী আরও জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। হোমিওপ্যাথির মূলনীতি হলো শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উদ্দীপিত করা, যা অতিরিক্ত প্রয়োগের ফলে ব্যাহত হয়।
৬. প্রাকৃতিক সুস্থতার ব্যাঘাত: হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় শরীরের প্রাকৃতিক সুস্থতা বা স্বাভাবিক ভারসাম্য বজায় রাখার উপর জোর দেওয়া হয়। কিন্তু যদি নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি ঔষধ পুনঃপ্রয়োগ করা হয়, তবে শরীরের স্বাভাবিক সুস্থতা ব্যাহত হতে পারে এবং এটি রোগীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
উপসংহার:
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে অপরিমিত মাত্রায় ঔষধ পুনঃপ্রয়োগ করা অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং এটি রোগীর জন্য মারাত্মক কুফল বয়ে আনতে পারে। হ্যানেম্যানের নির্দেশিকা মেনে সঠিক মাত্রায় এবং সময়ে ঔষধ প্রয়োগ করা উচিত, যাতে রোগীর শরীরে সুস্থতার প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে সম্পন্ন হয় এবং কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া না ঘটে।
রেফারেন্স:
- Hahnemann, Samuel. Organon of Medicine. 6th edition.
- Close, Stuart. The Genius of Homeopathy.