Best Homeopathic Treatment

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র

দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র হলো এমন একটি ধাপ, যেখানে প্রাথমিক ওষুধ প্রয়োগের পর রোগের প্রতিক্রিয়া এবং উপসর্গের পর্যালোচনার ভিত্তিতে নতুন বা সংশোধিত ব্যবস্থাপত্র নির্ধারণ করা হয়। প্রথম ব্যবস্থাপত্র বা প্রাথমিক ওষুধ রোগীকে দেওয়ার পর চিকিৎসক রোগের প্রগতিশীলতা, রোগীর মানসিক ও শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন এবং তার ওষুধের প্রতিক্রিয়া মূল্যায়ন করেন। হোমিওপ্যাথিতে এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি রোগের প্রকৃত মূলে কাজ করে এবং দীর্ঘমেয়াদে রোগীর সুস্থতা নিশ্চিত করতে সহায়ক।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো রোগীর সমগ্র দেহ এবং মনকে সার্বিকভাবে বিবেচনা করা। প্রথমে রোগীর বর্তমান উপসর্গ, তার শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা বিশ্লেষণ করা হয় এবং সেই অনুযায়ী সঠিক ওষুধ নির্ধারণ করা হয়। তবে, সময়ের সাথে সাথে রোগের প্রগতি বা অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তখন দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রয়োজন হয়। হ্যানিম্যান তার বিখ্যাত বই “Organon of Medicine” এর ১০তম অধ্যায়ে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রের গুরুত্ব এবং কীভাবে এটি রোগীর সামগ্রিক চিকিৎসা প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কাজ করে, তা ব্যাখ্যা করেছেন।

দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রের প্রয়োজনীয়তা এবং প্রক্রিয়া

দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রের প্রধান উদ্দেশ্য হলো রোগীর শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা এবং সেই পরিবর্তনের ওপর ভিত্তি করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া। প্রথম ওষুধ প্রয়োগের পর যদি রোগীর অবস্থার উন্নতি হয় তবে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র নির্ধারণের ক্ষেত্রে মূল ওষুধ অব্যাহত রাখা যেতে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে যদি রোগীর মধ্যে উপসর্গের পরিবর্তন দেখা দেয় বা নতুন কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয়, তবে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে প্রাথমিক ওষুধ পরিবর্তন করে নতুন ওষুধের প্রয়োগ করা হয়। হোমিওপ্যাথিতে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রের গুরুত্ব রয়েছে কারণ এতে রোগের মূলে যাওয়ার জন্য ওষুধের সঠিক মাত্রা এবং প্রকার নির্ধারণ করা সম্ভব হয়।

দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রের সময়সীমা ও নজরদারি

দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র নির্ধারণের জন্য চিকিৎসকের নজরদারি এবং রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ অপরিহার্য। হোমিওপ্যাথিক ওষুধ প্রয়োগের পর রোগীকে পরামর্শ দেওয়া হয় যাতে তিনি চিকিৎসকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখেন। সাধারণত, প্রাথমিক ওষুধ প্রয়োগের দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর দ্বিতীয়বারের মতো রোগীর অবস্থা পুনর্বিবেচনা করা হয়। তবে যদি রোগীর অবস্থা ত্বরিত পরিবর্তনের দিকে যায়, তাহলে দ্রুত দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, হ্যানিম্যানের নীতি অনুযায়ী দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র নির্ধারণের আগে, চিকিৎসককে রোগীর শারীরিক এবং মানসিক প্রক্রিয়া গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হয়।

হ্যানিম্যান তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র নির্ধারণে অতিরিক্ত সতর্কতা প্রয়োজন কারণ একক ভুল চিকিৎসা রোগের অবনতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। হ্যানিম্যানের তত্ত্ব অনুসারে রোগীর পূর্ণাঙ্গ সুস্থতার জন্য তার দেহের বিভিন্ন স্তরে কাজ করা জরুরি, এবং এজন্য চিকিৎসার প্রতিটি স্তরে গভীর পর্যবেক্ষণ দরকার।

দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে ব্যবহৃত প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি

অধুনা, দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। রোগীর মনের এবং শরীরের পরিবর্তন বিশ্লেষণের জন্য বিভিন্ন স্ক্যানিং পদ্ধতি, যেমন ব্লাড টেস্ট, ইউরিন টেস্ট এবং অন্যান্য স্ক্যানিং প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে, যা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার সাথে একীভূত করা হচ্ছে। আধুনিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রের ক্ষেত্রে রোগীর মানসিক অবস্থার গুরুত্ব দেন এবং ওষুধের পরিমাণ নির্ধারণে মনোযোগী থাকেন।

রেফারেন্স:

  • Hahnemann, Samuel. Organon of Medicine. 6th Edition, B. Jain Publishers, 2002.
  • Kent, James Tyler. Lectures on Homoeopathic Philosophy. B. Jain Publishers, 1997.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *