হোমিওপ্যাথিক নিয়ম অনুযায়ী ঔষধ কি? এবং অমোঘ ঔষধ বলতে কি বুঝায়
হোমিওপ্যাথিক নিয়ম অনুযায়ী ঔষধ এবং অমোঘ ঔষধ (Infallible Remedy)
হোমিওপ্যাথি একটি বিশেষ ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে “সিমিলিয়া সিমিলিবাস কিউরেন্টার” অর্থাৎ “সদৃশ দ্বারা সদৃশের চিকিৎসা” নীতি অনুসরণ করা হয়। এই পদ্ধতিতে ঔষধ নির্বাচন করা হয় রোগীর লক্ষণ এবং মানসিক অবস্থা অনুযায়ী। হোমিওপ্যাথিক ঔষধ রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক হয় এবং শরীরকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে।
হোমিওপ্যাথিক ঔষধের বৈশিষ্ট্য
হোমিওপ্যাথিক ঔষধকে শরীরের ভিতরের উৎসাহ প্রক্রিয়াকে উদ্দীপ্ত করার জন্য তৈরি করা হয়। এতে সাধারণত প্রাকৃতিক উপাদান যেমন গাছপালা, খনিজ এবং প্রাণীজ উপাদান ব্যবহৃত হয়। এই ঔষধ সাধারণত খুবই মৃদু এবং নির্দিষ্ট মাত্রায় নির্ধারিত হয়।
হোমিওপ্যাথিক ঔষধের মূলনীতি
১. অল্প মাত্রা (Minimum Dose): হোমিওপ্যাথিক ঔষধ খুবই ক্ষুদ্র পরিমাণে প্রয়োগ করা হয়, যা শরীরের জন্য নিরাপদ। ২. সম্পূর্ণ মিলন (Totality of Symptoms): রোগীর শারীরিক, মানসিক এবং আবেগগত সমস্ত লক্ষণ বিবেচনা করে ঔষধ নির্বাচন করা হয়। ৩. প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি বৃদ্ধি (Vital Force): হোমিওপ্যাথিক ঔষধ শরীরের ভেতরে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে উদ্দীপ্ত করে, যা রোগকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে সহায়ক।
অমোঘ ঔষধ বলতে কি বুঝায়?
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে, অমোঘ ঔষধ (Infallible Remedy) বলতে বোঝায় এমন একটি ঔষধ, যা সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে রোগের সমস্ত লক্ষণ নির্মূল করতে সক্ষম হয় এবং পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি ছাড়াই রোগ নিরাময় করে। অর্থাৎ, যদি রোগীর শারীরিক ও মানসিক লক্ষণের সাথে একটি নির্দিষ্ট ঔষধ পুরোপুরি মিলে যায়, তবে সেটি অমোঘ ঔষধ হিসেবে কাজ করে। এটি রোগীকে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ করে তোলে এবং ভবিষ্যতে একই রোগ পুনরায় দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
অমোঘ ঔষধের বৈশিষ্ট্য
১. সম্পূর্ণ মিলন: রোগীর সমস্ত লক্ষণ এবং মনের অবস্থা অনুযায়ী ঔষধের মিলন। ২. একক প্রয়োগ: এক সময়ে একটি মাত্র ঔষধ প্রয়োগ করা হয় যা সঠিকভাবে নির্বাচিত হলে রোগ নির্মূল করতে সক্ষম হয়। ৩. স্থায়ী সমাধান: এই ঔষধ প্রয়োগের ফলে রোগের পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা কমে যায় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
অমোঘ ঔষধের কার্যকারিতা
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার প্রবক্তা ড. স্যামুয়েল হ্যানেমান অমোঘ ঔষধকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে ব্যাখ্যা করেছেন। তার মতে, সঠিক ঔষধ প্রয়োগ রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার পুরোপুরি মিল রেখে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উদ্দীপ্ত করে এবং শরীরের ভেতর থেকে রোগমুক্তি সম্ভব হয়।
উদাহরণ
যেমন, একজন রোগীর লক্ষণ যদি Sulphur নামক ঔষধের লক্ষণগুলির সাথে পুরোপুরি মিলে যায় এবং সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করা হয়, তবে এটি সেই রোগীর জন্য অমোঘ ঔষধ হিসেবে কাজ করতে পারে।
বইয়ের রেফারেন্স
- “Organon of Medicine” – Dr. Samuel Hahnemann, Aphorisms 271-273
- “Lectures on Homoeopathic Materia Medica” by Dr. J.T. Kent
- “Materia Medica Pura” by Samuel Hahnemann
এই আলোচনার মাধ্যমে হোমিওপ্যাথিক ঔষধের নিয়ম ও অমোঘ ঔষধের সংজ্ঞা এবং গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হলে, এটি রোগের মূল কারণ নির্মূল করতে এবং রোগীর দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতার জন্য সহায়ক হয়।