Best Homeopathic Treatment

বাহ্যিক্য ঔষধ প্রয়োগ বলতে কি বুঝায়

বাহ্যিক্য ঔষধ

বাহ্যিক্য ঔষধ প্রয়োগ বলতে কি বুঝায়

হোমিওপ্যাথিক নিয়ম অনুযায়ী বাহ্যিক ঔষধ প্রয়োগ

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী, বাহ্যিক ঔষধ প্রয়োগের অর্থ হলো রোগের বাহ্যিক লক্ষণ বা উপসর্গের উপর সরাসরি প্রয়োগ করা। বাহ্যিক ঔষধ বলতে সাধারণত ত্বকে বা শরীরের বাহ্যিক অংশে প্রয়োগযোগ্য মলম, ক্রিম বা তরল ওষুধ বোঝানো হয়। তবে স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের প্রতিষ্ঠিত হোমিওপ্যাথিক দর্শনে বাহ্যিক ঔষধ প্রয়োগ নিয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।

হ্যানিম্যানের মতে বাহ্যিক ঔষধের প্রয়োগ

স্যামুয়েল হ্যানিম্যান, হোমিওপ্যাথির প্রতিষ্ঠাতা, তার বিখ্যাত গ্রন্থ Organon of Medicine-এ উল্লেখ করেছেন যে বাহ্যিক ঔষধ ব্যবহার করলে রোগের মূল কারণকে আক্রমণ না করে শুধুমাত্র বাহ্যিক উপসর্গগুলো চাপা দেওয়া হয়। তার মতে, বাহ্যিক ওষুধ সরাসরি দেহের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্যকে প্রভাবিত না করে কেবলমাত্র উপসর্গগুলির সাময়িক উপশম করে, যা মূল সমস্যাকে আরও গভীরে নিয়ে যেতে পারে।

হ্যানিম্যান বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন যে, বাহ্যিক প্রয়োগের মাধ্যমে ত্বকের বা বাহ্যিক কোনো সংক্রমণ বা সমস্যা যদি দূর হয়, তাহলে এটি দেহের অভ্যন্তরে আরও গুরুতর সমস্যার জন্ম দিতে পারে। এই কারণেই তিনি বাহ্যিক ঔষধের ব্যবহারকে সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন এবং দেহের অভ্যন্তরীণ শক্তিকে জাগিয়ে তোলার মাধ্যমে রোগ নিরাময়ের ওপর বেশি জোর দিয়েছেন।

বাহ্যিক ঔষধ প্রয়োগের উদাহরণ

বাহ্যিক প্রয়োগের উদাহরণ হিসেবে ত্বকের চর্মরোগ, ফোঁড়া, ক্ষত, এবং অন্যান্য বাহ্যিক সংক্রমণ উল্লেখ করা যায়। এই ধরনের সমস্যার জন্য প্রচলিত চিকিৎসাবিদ্যায় বাহ্যিক মলম বা ক্রিম প্রয়োগ করা হয়, যা কেবলমাত্র ত্বকের সমস্যাগুলোকে সাময়িকভাবে উপশম করে। কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে, এই ধরনের সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করে তার চিকিৎসা করা হয়, যাতে বাহ্যিক উপসর্গগুলি পুনরায় ফিরে না আসে।

বাহ্যিক ঔষধের ব্যবহার সম্পর্কে হোমিওপ্যাথির সতর্কতা

হ্যানিম্যানের মতে, বাহ্যিক ঔষধ ব্যবহারের মাধ্যমে দেহের অভ্যন্তরীণ শক্তির সাথে কোনো সংযোগ স্থাপিত হয় না, ফলে রোগের মূল কারণ ঠিক থাকে। এ কারণে, বাহ্যিক ঔষধের অপব্যবহার করলে দেহের গভীরে থাকা অসুখ আরও বড় আকারে প্রকাশিত হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ত্বকের উপসর্গ বাহ্যিকভাবে চিকিৎসা করা হলে, তা দেহের অভ্যন্তরে অপ্রকাশিত বা জটিল রূপ নিতে পারে, যেমন কোনো অভ্যন্তরীণ সংক্রমণ বা সিস্টেমিক রোগ।

স্থানীয় রোগের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ চিকিৎসা

হোমিওপ্যাথি বিশ্বাস করে যে সমস্ত রোগই শরীরের জীবনীশক্তি বা ভাইটাল ফোর্সের ব্যর্থতার ফলাফল। তাই স্থানীয় রোগগুলোর বাহ্যিক লক্ষণ চিকিৎসার মাধ্যমে দূর করা হলে প্রকৃত রোগ নিরাময় হয় না। স্থানীয় রোগের ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক ওষুধের মাধ্যমে দেহের অভ্যন্তরীণ শক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়, যাতে রোগের মূল কারণ দূর হয় এবং রোগের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

হ্যানিম্যানের উপদেশ এবং আধুনিক চিকিৎসার প্রাসঙ্গিকতা

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে বাহ্যিক ঔষধের প্রয়োগ সীমাবদ্ধ রাখা হলেও, আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যায় বাহ্যিক ঔষধের গুরুত্ব রয়েছে। তবে হ্যানিম্যানের তত্ত্ব অনুযায়ী, রোগের মূল কারণ নিরাময়ের জন্য দেহের সামগ্রিক শক্তি পুনরুদ্ধার করা জরুরি, যা শুধুমাত্র বাহ্যিক ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে সম্ভব নয়। আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যায়ও কিছু ক্ষেত্রে হ্যানিম্যানের এই দর্শনের প্রাসঙ্গিকতা পাওয়া যায়, যেখানে শুধু বাহ্যিক চিকিৎসার পরিবর্তে রোগের মূল কারণের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়।

উপসংহার

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে বাহ্যিক ঔষধ প্রয়োগ সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। হ্যানিম্যানের মতে, বাহ্যিক ঔষধের মাধ্যমে শুধুমাত্র উপসর্গগুলিকে সমাধান করা হলে দেহের অভ্যন্তরীণ অসুখ আরও গভীরভাবে প্রভাবিত হতে পারে। এই কারণে, বাহ্যিক ঔষধ প্রয়োগের আগে রোগের মূল কারণ খুঁজে বের করে সেটির চিকিৎসা করা প্রয়োজন। বাহ্যিক ওষুধের ব্যবহার খুবই সীমাবদ্ধ ও সতর্কভাবে করা উচিত।

রেফারেন্স:

  1. Hahnemann, Samuel. Organon of Medicine. 6th ed. New Delhi: B. Jain Publishers, 1982.
  2. Coulter, Harris. Divided Legacy: A History of the Schism in Medical Thought. Vol. 3. Richmond: North Atlantic Books, 1982.
  3. Ullman, Dana. Discovering Homeopathy: Medicine for the 21st Century. North Atlantic Books, 1991.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *