Best Homeopathic Treatment

মিথ্যা চিররোগ বলতে কি বুঝায় এবং এর চিকিৎসা কিভাবে করতে হয়

মিথ্যা চিররোগ

মিথ্যা চিররোগ বলতে কি বুঝায় এবং এর চিকিৎসা কিভাবে করতে হয়

হোমিওপ্যাথিক নিয়ম অনুযায়ী মিথ্যা চিররোগ বলতে কি বুঝায় এবং এর চিকিৎসা কিভাবে করতে হয়

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে বিভিন্ন রোগের ধরন বিশ্লেষণ করা হয়, এবং এদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মিথ্যা চিররোগ (Pseudo Chronic Diseases)। মিথ্যা চিররোগ বলতে বুঝায় সেই সকল দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলি, যা মূলত বাহ্যিক কারণে সৃষ্টি হয় এবং শরীরের জীবনীশক্তির (Vital Force) উপর সঠিক প্রভাব না ফেললেও রোগীর শরীরে দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়ে থাকে। ড. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান তার বই Organon of Medicine এ এই রোগের ধারণা এবং এর চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

মিথ্যা চিররোগ কি?

মিথ্যা চিররোগ হলো সেই ধরনের রোগ, যা দীর্ঘদিন ধরে থাকে কিন্তু এর কারণ অভ্যন্তরীণ মায়াজম নয়। এটি বাহ্যিক প্রভাব, পরিবেশগত কারণ, খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা, মানসিক চাপ, বা ঔষধের ভুল ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট হয়। মিথ্যা চিররোগের ক্ষেত্রে রোগের মূলে জীবনীশক্তির অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা বা গভীর সমস্যা থাকে না। বরং বাহ্যিক কারণগুলো দূর করা হলে এই রোগগুলো নিজে থেকেই সেরে উঠতে পারে।

উদাহরণ:

  1. ধূমপানের কারণে কাশি বা ফুসফুসের সমস্যা।
  2. অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে মাথাব্যথা বা অনিদ্রা।
  3. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে হজমের সমস্যা।
  4. দীর্ঘদিন ধরে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে অন্ত্রের সমস্যার সৃষ্টি।

মিথ্যা চিররোগের চিকিৎসা

মিথ্যা চিররোগের চিকিৎসা করার জন্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা রোগীর জীবনযাত্রা এবং বাহ্যিক কারণগুলোর দিকে বিশেষভাবে নজর দেন। এই ধরনের রোগের ক্ষেত্রে জীবনীশক্তির ভারসাম্যহীনতা না থাকলেও, বাহ্যিক প্রভাবের কারণে রোগ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায়। তাই চিকিৎসার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়:

১. বাহ্যিক কারণগুলির মূল্যায়ন

রোগের সঠিক কারণ নির্ধারণের জন্য চিকিৎসক রোগীর জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ এবং অভ্যাসের উপর বিশেষ নজর দেন। এই মূল্যায়নের মাধ্যমে জানা যায়, রোগটি আদতে কৃত্রিম কি না এবং এর সঠিক কারণ কি।

২. রোগীর অভ্যাস পরিবর্তন

মিথ্যা চিররোগের চিকিৎসায় রোগীর অভ্যাস পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, যদি ধূমপানের কারণে কাশি সৃষ্টি হয়, তবে রোগীকে ধূমপান বন্ধ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। যদি মানসিক চাপের কারণে সমস্যা সৃষ্টি হয়, তবে তাকে মানসিক স্বস্তির জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়।

৩. হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নির্বাচন

যদিও মিথ্যা চিররোগের মূল কারণ বাহ্যিক, তবুও হোমিওপ্যাথিক ঔষধ জীবনীশক্তির স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি রোগী মানসিক চাপের কারণে সমস্যায় পড়ে, তবে Ignatia বা Nux Vomica এর মতো হোমিওপ্যাথিক ঔষধ উপকারী হতে পারে। এই ঔষধগুলো রোগীর মানসিক অবস্থা উন্নত করতে এবং শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।

৪. ধীরে ধীরে ঔষধের ব্যবহার কমানো

মিথ্যা চিররোগের ক্ষেত্রে, যদি রোগটি পূর্বের কোনো চিকিৎসার ভুলের কারণে সৃষ্টি হয়ে থাকে, তবে ধীরে ধীরে সেই ঔষধের ব্যবহার বন্ধ করতে হয়। এতে করে শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা পুনরুদ্ধার হয় এবং রোগীর অবস্থার উন্নতি হয়।

বইয়ের রেফারেন্স

  1. Organon of Medicine – Dr. Samuel Hahnemann, 6th Edition, Aphorism 71-80, যেখানে মিথ্যা চিররোগের ব্যাখ্যা এবং এর চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
  2. The Chronic Diseases – Dr. Samuel Hahnemann, যেখানে মিথ্যা এবং প্রকৃত চিররোগের মধ্যে পার্থক্য এবং চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
  3. Lectures on Homeopathic Philosophy – Dr. J.T. Kent, যেখানে রোগের প্রকৃতি, মায়াজম এবং মিথ্যা চিররোগের উপর ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *