Best Homeopathic Treatment

প্রয়োগকৃত ঔষধ ভুল হলে চিকিৎসকের কর্তব্য কি

প্রয়োগকৃত ঔষধ ভুল

প্রয়োগকৃত ঔষধ ভুল হলে চিকিৎসকের কর্তব্য কি

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে ভুল ঔষধ প্রয়োগ হলে চিকিৎসকের কর্তব্য

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোগীর চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পূর্ণভাবে রোগীর লক্ষণ ও শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভরশীল। যখন কোনো রোগীকে ভুল ঔষধ প্রয়োগ করা হয়, তখন চিকিৎসকের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। ভুল ঔষধ প্রয়োগের ফলে রোগীর শরীরে প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে, এবং চিকিৎসকের উচিত অবিলম্বে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

ভুল ঔষধ প্রয়োগের লক্ষণ:

ভুল ঔষধ প্রয়োগের পরে রোগীর শরীরে একাধিক পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। হ্যানেম্যান তার “Organon of Medicine” বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ে ভুল ঔষধ প্রয়োগের ফলে কীভাবে রোগের লক্ষণ পরিবর্তিত হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। যদি রোগীর রোগের লক্ষণ আরও খারাপ হয় বা নতুন লক্ষণ প্রকাশ পায়, তা হলে সেটি প্রায়শই ভুল ঔষধের প্রয়োগের ফলাফল। যেমন:

  • রোগের পূর্বের লক্ষণগুলো তীব্রভাবে বেড়ে যায়।
  • নতুন ও অপ্রত্যাশিত লক্ষণ প্রকাশ পায়।
  • রোগী অসুস্থতার জটিলতায় পড়ে যায় এবং সুস্থতার লক্ষণ দেখা যায় না।

চিকিৎসকের কর্তব্য:

১. রোগীর লক্ষণ বিশ্লেষণ করা:
চিকিৎসককে প্রথমে রোগীর নতুন ও পরিবর্তিত লক্ষণগুলো বিশ্লেষণ করতে হবে। এর মাধ্যমে তিনি বুঝতে পারবেন যে প্রয়োগকৃত ঔষধটি আদৌ সঠিক ছিল কি না। “Organon of Medicine” (Aphorism 252) অনুসারে, রোগীর শরীরে যদি অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তবে তা ভুল ঔষধের প্রয়োগের ইঙ্গিত হতে পারে।

২. ঔষধ বন্ধ করা:
যদি ভুল ঔষধ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে, চিকিৎসকের প্রথম কাজ হবে সেই ঔষধ অবিলম্বে বন্ধ করা। হোমিওপ্যাথিক ঔষধের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, তাই ঔষধ বন্ধ করে রোগীর শরীর থেকে এর প্রভাব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার জন্য পর্যবেক্ষণ করা উচিত।

৩. রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ:
ঔষধ বন্ধ করার পরে চিকিৎসকের দায়িত্ব হবে রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা। রোগীর শরীর থেকে পূর্বের ঔষধের প্রভাব সম্পূর্ণরূপে দূর না হওয়া পর্যন্ত নতুন কোনো ঔষধ প্রয়োগ করা উচিত নয়। Dr. Samuel Hahnemann-এর মতানুযায়ী, রোগীর শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে সঠিক অবস্থায় ফিরে আসার জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।

৪. নতুন ঔষধ নির্বাচন:
যখন পূর্বের ঔষধের প্রভাব শেষ হয়ে যায় এবং রোগীর শরীর প্রাথমিক অবস্থায় ফিরে আসে, তখন চিকিৎসককে পুনরায় রোগীর সম্পূর্ণ ইতিহাস, শারীরিক লক্ষণ ও মানসিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে নতুন ঔষধ নির্বাচন করতে হবে। “The Chronic Diseases” বইতে হ্যানেম্যান উল্লেখ করেছেন যে, রোগের প্রকৃতি ও রোগীর শারীরিক গঠন অনুসারে সঠিক ঔষধ নির্বাচনই দীর্ঘস্থায়ী আরোগ্যের মূল চাবিকাঠি।

৫. অনুশীলনের পুনর্মূল্যায়ন:
প্রতিটি ভুল ঔষধ প্রয়োগ চিকিৎসকের জন্য শিক্ষা। এই কারণে, চিকিৎসককে তার রোগ নির্ণয় ও ঔষধ নির্বাচনের পদ্ধতিটি পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত। চিকিৎসককে রোগীর লক্ষণসমূহ আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত এবং ঔষধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে আরও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

উপসংহার:

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে রোগীর আরোগ্যের জন্য ঔষধ প্রয়োগের সঠিকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুল ঔষধ প্রয়োগের ফলে রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে, যা থেকে রক্ষা পেতে চিকিৎসককে অবিলম্বে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। রোগীর শরীরের লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করা, ভুল ঔষধ বন্ধ করা, এবং নতুন ঔষধের জন্য পুনরায় রোগ নির্ণয় করাই চিকিৎসকের প্রধান কর্তব্য। হ্যানেম্যানের “Organon of Medicine” এবং “The Chronic Diseases” বইয়ে এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত নির্দেশনা পাওয়া যায়।

রেফারেন্স:

  • Hahnemann, Samuel. Organon of Medicine. 6th edition.
  • Hahnemann, Samuel. The Chronic Diseases.

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *