কি অবস্থায় পরিবর্তিত শক্তিতে প্রকয়োগকৃত ঔষধ পুনঃপ্রয়োগ করা হয়।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে পরিবর্তিত শক্তিতে ঔষধ পুনঃপ্রয়োগের অবস্থা
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে সঠিক ঔষধ প্রয়োগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, অনেক ক্ষেত্রে একই ঔষধ পরিবর্তিত শক্তিতে পুনরায় প্রয়োগ করা প্রয়োজন হতে পারে। এটি তখনই ঘটে যখন রোগীর লক্ষণগুলো আংশিকভাবে বা সাময়িকভাবে উন্নতি ঘটে, কিন্তু সম্পূর্ণ সুস্থতা অর্জিত হয় না। পরিবর্তিত শক্তিতে ঔষধ পুনঃপ্রয়োগের জন্য হ্যানেম্যান তার “Organon of Medicine” বইয়ে এবং “Chronic Diseases” গ্রন্থে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
কখন পরিবর্তিত শক্তিতে ঔষধ পুনঃপ্রয়োগ প্রয়োজন হয়:
১. রোগের আংশিক উন্নতি:
যদি কোনো রোগী একটি নির্দিষ্ট ঔষধ প্রয়োগের পর আংশিকভাবে সুস্থ হয়ে ওঠে কিন্তু সম্পূর্ণ সুস্থতা অর্জন না করে, তখন ঔষধের শক্তি পরিবর্তন করে পুনরায় প্রয়োগ করা যেতে পারে। “Organon of Medicine” (Aphorism 246) অনুযায়ী, ঔষধের পুনঃপ্রয়োগ তখনই করা উচিত যখন রোগীর লক্ষণগুলো সুপ্ত অবস্থায় থাকে বা পুনঃউত্থিত হয়।
২. ঔষধের প্রাথমিক প্রভাবের দুর্বলতা:
কিছু ক্ষেত্রে, ঔষধ প্রয়োগের পর তার প্রাথমিক প্রভাব দুর্বল হয়ে যায়। এই সময়ে, চিকিৎসককে একই ঔষধের একটি উচ্চতর শক্তিতে পুনরায় প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। হ্যানেম্যানের মতে, রোগীর শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে এবং সম্পূর্ণ আরোগ্য নিশ্চিত করতে ঔষধের শক্তি পরিবর্তন প্রয়োজনীয় হতে পারে।
৩. জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী রোগ:
যদি রোগ দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং একাধিক ঔষধ প্রয়োগের পরেও সম্পূর্ণ সুস্থতা না আসে, তখন ঔষধের শক্তি বাড়িয়ে পুনরায় প্রয়োগ করা হয়। হ্যানেম্যান তার “Chronic Diseases” গ্রন্থে দীর্ঘস্থায়ী রোগের ক্ষেত্রে কীভাবে শক্তি পরিবর্তন করে পুনঃপ্রয়োগ করা উচিত, সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
৪. নতুন লক্ষণের উদ্ভব:
কখনও কখনও রোগীর শরীরে নতুন লক্ষণ দেখা দিলে, একই ঔষধ নতুন শক্তিতে পুনঃপ্রয়োগ করা হয়। “Organon of Medicine”-এর Aphorism 248 অনুযায়ী, রোগীর নতুন লক্ষণগুলো যদি পুরোনো লক্ষণগুলোর সঙ্গে মিলে যায়, তবে একই ঔষধের শক্তি পরিবর্তন করে পুনঃপ্রয়োগ করা যেতে পারে।
ঔষধের শক্তি পরিবর্তনের নিয়ম:
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় প্রতিটি ঔষধের শক্তি পরিবর্তনের সময় অত্যন্ত সতর্কতা প্রয়োজন। নিম্নলিখিত নিয়মগুলো অনুসরণ করা উচিত:
- প্রাথমিকভাবে, রোগীর সম্পূর্ণ শারীরিক ও মানসিক লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করা।
- রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ভিত্তিতে ঔষধের শক্তি পরিবর্তন করা।
- পুনঃপ্রয়োগের আগে পূর্বের ঔষধের প্রভাব সম্পূর্ণরূপে শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা।
উপসংহার:
পরিবর্তিত শক্তিতে ঔষধ পুনঃপ্রয়োগ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি তখনই করা হয় যখন রোগী আংশিক সুস্থতা লাভ করে বা রোগের নতুন লক্ষণ দেখা দেয়। হ্যানেম্যান তার গ্রন্থগুলোতে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং রোগীর সম্পূর্ণ আরোগ্যের জন্য সঠিক শক্তিতে ঔষধ পুনঃপ্রয়োগ করার উপর জোর দিয়েছেন।
রেফারেন্স:
- Hahnemann, Samuel. Organon of Medicine. 6th edition.
- Hahnemann, Samuel. The Chronic Diseases.