Best Homeopathic Treatment

ভাইরাস জ্বর কাকে বলে উহার কারণ কি উহার চিকিৎসা ও প্রতিকার

ভাইরাস জ্বর

ভাইরাস জ্বর কাকে বলে উহার কারণ কি উহার চিকিৎসা ও প্রতিকার

ভাইরাস জ্বর: হোমিওপ্যাথিক ও অন্যান্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ

ভাইরাস জ্বর হলো এমন একটি জ্বর, যা ভাইরাসজনিত সংক্রমণের ফলে সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায় এবং এর ফলে দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এটি সাধারণত এক বা একাধিক লক্ষণ নিয়ে আসে যেমন মাথাব্যথা, শরীরব্যথা, দুর্বলতা, গলা ব্যথা, কাশি ইত্যাদি।

ভাইরাস জ্বরের কারণ

ভাইরাস জ্বরের প্রধান কারণ হলো ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। বিভিন্ন ভাইরাসের প্রভাবে এই জ্বর সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  1. ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস: সাধারণ ফ্লু এর মূল কারণ।
  2. ডেঙ্গু ভাইরাস: ডেঙ্গু জ্বর সৃষ্টি করে।
  3. জিকা ভাইরাস: বিশেষত গর্ভবতী নারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
  4. করোনা ভাইরাস: কোভিড-১৯ এর জন্য দায়ী।
  5. চিকুনগুনিয়া ভাইরাস: মশাবাহিত এই ভাইরাস জ্বর ও হাড়ের ব্যথা সৃষ্টি করে।
  6. এন্টারোভাইরাস: পোলিও ও হাত, পা ও মুখের রোগের সাথে সম্পর্কিত।
  7. রুবেলা ভাইরাস: রুবেলা বা জার্মান মিজেলস সৃষ্টি করে।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ভাইরাস জ্বরের প্রতিকার

হোমিওপ্যাথিতে ভাইরাস জ্বরকে নিরাময় করতে রোগীর লক্ষণ ও জীবনীশক্তির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় প্রতিটি রোগীর জন্য নির্দিষ্ট ঔষধ নির্বাচন করা হয়, যা রোগের কারণ নয় বরং রোগীর উপসর্গের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়।

হোমিওপ্যাথিক ঔষধসমূহ:

  1. অ্যারসেনিকাম অ্যালবাম (Arsenicum Album): দুর্বলতা, পিপাসা, বারবার পানি পান করা এবং শ্বাসকষ্টের লক্ষণ থাকলে ব্যবহৃত হয়।
  2. বেলাডোনা (Belladonna): হঠাৎ তাপমাত্রা বৃদ্ধি, তীব্র মাথাব্যথা এবং লাল চেহারা নিয়ে ব্যবহৃত হয়।
  3. ইউপেটোরিয়াম পারফোলিয়াটাম (Eupatorium Perfoliatum): ভাইরাস জ্বরের সাথে প্রচণ্ড হাড়ের ব্যথা হলে ব্যবহৃত হয়।
  4. গেলসিমিয়াম (Gelsemium): অবসাদ, দুর্বলতা এবং হালকা জ্বরের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়।
  5. ফেরাম ফস (Ferrum Phos): ভাইরাস জ্বরের প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবহৃত হয়।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার পদ্ধতি:

  • হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় প্রতিটি রোগীর জন্য আলাদা করে ঔষধ নির্ধারণ করা হয়। রোগীর সকল শারীরিক, মানসিক ও আবেগগত উপসর্গের ভিত্তিতে ঔষধ নির্বাচন করা হয়।
  • রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করা হয়।
  • দীর্ঘমেয়াদি ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে জীবনধারণের নিয়ম, খাদ্যাভ্যাস ও মানসিক সুস্থতার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

অন্যান্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে ভাইরাস জ্বরের চিকিৎসা

অ্যালোপ্যাথি (Allopathy) এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ভাইরাস জ্বরের চিকিৎসায় সাধারণত লক্ষণভিত্তিক ঔষধ ব্যবহৃত হয়।

অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা:

  • অ্যান্টি-ভাইরাল ঔষধ: ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে অ্যান্টি-ভাইরাল ঔষধ ব্যবহৃত হয় যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য ওসেল্টামিভির।
  • প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন: তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং শরীর ব্যথার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • ফ্লুইড গ্রহণ: ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা পেতে প্রচুর পানি পান করানো হয়।

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা:

  • তুলসী এবং আদা: ভাইরাস জ্বরের প্রতিরোধে আয়ুর্বেদিক গাছগুলোর ব্যবহার প্রচলিত।
  • গোলমরিচ ও মধু: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রাচীন আয়ুর্বেদিক পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ভাইরাস জ্বরের প্রতিকার ও প্রতিরোধ

  1. ব্যক্তিগত সুরক্ষা: ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মাস্ক পরিধান, হাত ধোয়া, এবং ভিড় এড়ানো জরুরি।
  2. টিকাদান: ফ্লু, ডেঙ্গু, কোভিড-১৯ ইত্যাদি ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা গ্রহণ করা।
  3. পর্যাপ্ত বিশ্রাম: শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম নেওয়া।
  4. পুষ্টিকর খাদ্য: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সুষম খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

বইয়ের রেফারেন্স:

  1. Organon of Medicine – Dr. Samuel Hahnemann, Aphorism 73-82, যেখানে রোগের কারণ এবং চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
  2. Homeopathic Materia Medica – Dr. William Boericke, ভাইরাস জ্বরের জন্য প্রযোজ্য ঔষধসমূহের তালিকা।
  3. Principles of Virology – Microbiology reference books discussing viral infections and treatments.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *