ব্যবস্থাপত্র ভুল হলে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যবস্থাপত্রের ভুল হলে তা দ্রুত শনাক্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হ্যানিম্যান তার বিখ্যাত গ্রন্থ “Organon of Medicine” এবং অন্যান্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের রচনায় ভুল ব্যবস্থাপত্র সংশোধনের কিছু করণীয় নীতিমালা প্রদান করেছেন।
প্রাথমিকভাবে, ব্যবস্থাপত্র ভুল হওয়ার অর্থ হতে পারে যে প্রয়োগকৃত ওষুধ রোগীর উপসর্গের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বা ওষুধটি রোগের মূলে পৌঁছাতে ব্যর্থ হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসককে রোগীর উপসর্গের প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করতে হবে এবং নতুন ব্যবস্থাপত্র প্রয়োগের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।
ব্যবস্থাপত্র ভুল হলে গ্রহণীয় ১০টি করণীয় ব্যবস্থা
- রোগীর উপসর্গের পুনর্মূল্যায়ন: প্রথমত, রোগীর উপসর্গের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করতে হবে। হ্যানিম্যানের মতে, রোগীর শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং প্রতিটি উপসর্গ নোট করতে হবে।
- পূর্ব ব্যবস্থাপত্রের পরিবর্তন করা: ভুল ব্যবস্থাপত্র বুঝতে পারলে চিকিৎসককে পূর্বের ওষুধের পরিবর্তে নতুন ওষুধের পরামর্শ দিতে হবে। তবে, সম্পূর্ণ নতুন ওষুধ দেওয়ার আগে রোগীর প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
- ওষুধের পটেন্সি পরিবর্তন: কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওষুধ পরিবর্তন না করে তার শক্তি বা পটেন্সি পরিবর্তন করে রোগীকে আরও উন্নত চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব হয়। উদাহরণস্বরূপ, কম শক্তির ওষুধ বেশি কার্যকরী হলে তা পরিবর্তন করা হয়।
- প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ: নতুন ব্যবস্থাপত্র প্রয়োগের পর রোগীর শরীরের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যদি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যায় তবে প্রয়োগ করা ওষুধ সঠিক। অন্যথায় আরও পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে।
- মানসিক অবস্থার বিশ্লেষণ: রোগীর মানসিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে ওষুধ নির্ধারণ করতে হবে। হ্যানিম্যান উল্লেখ করেছেন যে রোগীর মনের পরিবর্তনও ওষুধের কার্যকারিতার ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
- সহনীয়তা বিবেচনা করা: রোগীর দেহ যদি নির্দিষ্ট ওষুধ গ্রহণে সহনশীল না হয় তবে তা পরিবর্তন করতে হবে। সহনশীলতার অভাবে রোগীর উপসর্গের অবনতি দেখা দিতে পারে।
- প্রাথমিক ওষুধ পুনঃপ্রয়োগ: কোনো ক্ষেত্রে যদি প্রাথমিক ওষুধ সঠিক হয় তবে পুনরায় একই ওষুধ প্রয়োগ করা যায়। তবে এটি কেবলমাত্র রোগীর উপসর্গ পরিবর্তন না হলে প্রযোজ্য।
- উপসর্গের নতুন সেটের জন্য নতুন ওষুধ: রোগীর মধ্যে নতুন উপসর্গ দেখা দিলে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সেই উপসর্গের জন্য আলাদা ওষুধের পরামর্শ দিতে পারেন।
- পরামর্শদাতা সহায়তা গ্রহণ: জটিল ক্ষেত্রে অন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। হোমিওপ্যাথির অনেক বিশেষজ্ঞ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এমন কিছু পরামর্শ দিতে পারেন যা সাহায্যকারী হতে পারে।
- সহায়ক চিকিৎসা প্রয়োগ: কখনও কখনও হোমিওপ্যাথিক ওষুধের পাশাপাশি অন্যান্য প্রাকৃতিক উপায়ে রোগীর চিকিৎসা করা যেতে পারে, যেমন ডায়েট বা লাইফস্টাইল পরিবর্তন।
রেফারেন্স
- Hahnemann, Samuel. Organon of Medicine. 6th Edition, B. Jain Publishers, 2002।
- Kent, James Tyler. Lectures on Homoeopathic Philosophy. B. Jain Publishers, 1997।