ডেলিভারি হওয়ার আগ মুহূর্তে গর্ভবতী মায়ের করনীয় কি
ডেলিভারি পূর্ববর্তী করণীয়: হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ও অন্যান্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি
ডেলিভারির সময় প্রায় ঘনিয়ে এলে গর্ভবতী মায়েদের জন্য মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসময় সঠিক প্রস্তুতি গর্ভবতী মায়ের সুস্বাস্থ্য ও মসৃণ প্রসব নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। নিচে হোমিওপ্যাথিক এবং অন্যান্য চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী করণীয়গুলো তুলে ধরা হলো:
১. মানসিক প্রস্তুতি
ডেলিভারি পূর্বে মানসিক স্থিরতা অত্যন্ত জরুরি। প্রসবের আগে উদ্বেগ, অস্থিরতা ও মনস্তাত্ত্বিক চাপ বৃদ্ধি পেতে পারে। অনেক সময় মায়ের মানসিক অবস্থার উপর নির্ভর করে ডেলিভারি প্রক্রিয়াটি সহজ বা কঠিন হতে পারে। হোমিওপ্যাথিতে, Gelsemium বা Aconite ব্যবহার করে এই উদ্বেগ কমানো যেতে পারে। পাশাপাশি, ডাক্তারের কাছ থেকে সঠিক পরামর্শ ও সমর্থন মায়েদের মানসিকভাবে স্থির রাখে।
২. শারীরিক প্রস্তুতি
গর্ভবতী মায়েদের ডেলিভারি পূর্ববর্তী সময়ে কিছু হালকা ব্যায়াম করতে বলা হয় যা শরীরকে প্রসবের জন্য প্রস্তুত করে। Kegel exercises জরায়ুর মাংসপেশিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এছাড়া, হাঁটাহাঁটি এবং কিছু প্রসারণ ব্যায়াম মায়ের শরীরকে নমনীয় রাখতে সাহায্য করে। তবে, এই ব্যায়ামগুলো শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
৩. খাদ্য ও পুষ্টি গ্রহণ
প্রসবের আগে শরীরকে পর্যাপ্ত পুষ্টি ও শক্তি দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হালকা খাবার, বিশেষত প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং সহজপাচ্য খাবার খেতে পরামর্শ দেওয়া হয়। Arnica হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়, যা প্রসবের সময় শক্তি প্রদান এবং যন্ত্রণা কমাতে সহায়ক হতে পারে। এছাড়া, পর্যাপ্ত জল গ্রহণ শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং প্রসবের সময় সহায়ক হয়।
৪. পর্যাপ্ত বিশ্রাম
ডেলিভারির আগে পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিশ্চিত করা মায়ের শক্তি সঞ্চয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় Coffea Cruda প্রয়োগ করা হয় অনিদ্রা কমাতে। বিশ্রাম প্রসবের সময় শারীরিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরকে আরও স্থিতিশীল রাখে।
৫. প্রসব পরিকল্পনা
ডেলিভারির আগে গর্ভবতী মায়েরা ডাক্তারের পরামর্শে একটি প্রসব পরিকল্পনা তৈরি করতে পারেন, যাতে কীভাবে ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে তা নির্ধারিত থাকে। এই পরিকল্পনায় যন্ত্রপাতি ও আনুষঙ্গিক প্রস্তুতির পাশাপাশি জরুরি যোগাযোগের তালিকা অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত।
৬. শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ
প্রসবের আগে শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ শেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ব্যথা কমাতে এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। Chamomilla হোমিওপ্যাথিতে ব্যবহার করা হয়, যা ব্যথা সহনীয় করতে সহায়ক।
৭. হাসপাতাল বা ক্লিনিকের প্রস্তুতি
ডেলিভারির সময় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও উপকরণ সহ প্রস্তুতি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ব্যক্তিগত সামগ্রী এবং নবজাতকের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রস্তুত রাখা উচিত।
রেফারেন্স
- Murphy, R. (1993). Homeopathic Remedy Guide: A Quick Reference Handbook. Hpathy Publications.
- Kent, James T. (1993). Lectures on Homeopathic Materia Medica. B. Jain Publishers Pvt. Ltd.
- Davidson, J. (2008). A Practical Guide to Pregnancy & Childbirth for Health Professionals. Oxford University Press.
এই প্রস্তুতিগুলো গর্ভবতী মায়েদের নিরাপদ এবং মসৃণ ডেলিভারির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।