স্বপ্নদোষ কাকে বলে কি কারনে স্বপ্নের দোষ হয় এবং কতদিন পরপর স্বপ্নদোষ হলে নারী-পুরুষের কোন শারীরিক ক্ষতি হয় না
স্বপ্নদোষ (Nightfall বা Nocturnal Emission) হলো ঘুমের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বীর্যপাত বা যৌন স্রাবের ঘটনা। এটি মূলত পুরুষদের ক্ষেত্রে ঘটে, তবে নারীদের ক্ষেত্রেও যৌন উত্তেজনা বা স্রাব ঘটতে পারে। হোমিওপ্যাথি এবং অন্যান্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্বপ্নদোষকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তবে অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হলে শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
স্বপ্নদোষের কারণ
হোমিওপ্যাথিক মতে: হোমিওপ্যাথি মতে, স্বপ্নদোষের কারণগুলো বেশিরভাগই মানসিক ও শারীরিক ভারসাম্যহীনতার সঙ্গে সম্পর্কিত। কিছু সাধারণ কারণ:
- অতিরিক্ত যৌন চিন্তা: মানসিক উত্তেজনা বা অশ্লীল চিন্তা।
- ভিটাল ফোর্সের দুর্বলতা: শরীরের ভিটাল ফোর্স দুর্বল হলে।
- পুষ্টিহীনতা: পর্যাপ্ত পুষ্টি না পাওয়া।
- হজমের সমস্যা: হজম ও লিভারের অস্বাভাবিকতা।
অন্যান্য চিকিৎসা মতে: আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে, স্বপ্নদোষকে সাধারণত স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া হিসেবে ধরা হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি যৌন উত্তেজনার ফলে ঘটে।
- হরমোনের পরিবর্তন: টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বেড়ে গেলে।
- স্বাভাবিক যৌন চাহিদা: যৌনসম্পর্ক না করার কারণে শরীরে সঞ্চিত বীর্য নিঃসরণ।
- কিশোর বয়সে হরমোনজনিত পরিবর্তন: কিশোরদের ক্ষেত্রে প্রায়ই বেশি দেখা যায়।
- যৌন উত্তেজক স্বপ্ন: যৌন উত্তেজক স্বপ্ন দেখা।
কতদিন পরপর স্বপ্নদোষ হলে শারীরিক ক্ষতি হয় না
হোমিওপ্যাথিক মতে: স্বপ্নদোষের ফ্রিকোয়েন্সি সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। তবে হোমিওপ্যাথিতে ধরা হয়, মাসে ২-৩ বার স্বপ্নদোষ হলে তা স্বাভাবিক। যদি স্বপ্নদোষ খুব বেশি হয়ে থাকে, তবে এটি মানসিক বা শারীরিক দুর্বলতার লক্ষণ হতে পারে এবং চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।
অন্যান্য চিকিৎসা মতে: স্বপ্নদোষ সাধারণত শারীরিক ক্ষতির কারণ হয় না, যদি এটি নিয়মিত ও স্বাভাবিক ফ্রিকোয়েন্সিতে ঘটে। মাসে ২-৫ বার স্বপ্নদোষ পুরুষদের জন্য স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। যদি এটি বেশি হয় এবং এর ফলে শারীরিক দুর্বলতা, ক্লান্তি বা মানসিক অস্থিরতা দেখা দেয়, তবে এটি চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করতে পারে।
স্বপ্নদোষের প্রতিকার
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা:
- কাল্কারিয়া কার্ব (Calcarea Carbonica): স্বপ্নদোষ বেশি হলে।
- ফসফোরাস (Phosphorus): শারীরিক দুর্বলতার সঙ্গে স্বপ্নদোষ হলে।
- সেলেনিয়াম (Selenium): বীর্যক্ষরণ এবং শারীরিক দুর্বলতার জন্য।
- স্ট্যাফিস্যাগ্রিয়া (Staphysagria): মানসিক উত্তেজনার কারণে স্বপ্নদোষ হলে।
অন্যান্য চিকিৎসা:
- মানসিক প্রশান্তি: মানসিক চাপ কমানো এবং যৌন চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা।
- নিয়মিত ব্যায়াম: শরীরকে সক্রিয় রাখার মাধ্যমে স্বপ্নদোষের ফ্রিকোয়েন্সি কমানো।
- পুষ্টিকর খাবার: পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করে শরীরের শক্তি বাড়ানো।
- যৌনশিক্ষা: যৌন বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন এবং অশ্লীল চিন্তা বা উপকরণ এড়ানো।
করণীয় ও বর্জনীয়
করণীয়:
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম: পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখা।
- যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন: মানসিক চাপ কমানোর জন্য নিয়মিত যোগব্যায়াম করা।
- পুষ্টিকর খাবার: ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা।
বর্জনীয়:
- অতিরিক্ত যৌন উত্তেজক উপকরণ দেখা: অশ্লীল চলচ্চিত্র বা ছবি দেখা থেকে বিরত থাকা।
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ: মানসিক চাপ এড়িয়ে চলা।
- ধূমপান ও মদ্যপান: এগুলি শারীরিক দুর্বলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রেফারেন্স বই:
- স্যামুয়েল হ্যানিম্যান – Organon of Medicine
- ড. জর্জ ভিথুলকাস – The Science of Homeopathy
- ড. জন গ্রে – Men Are from Mars, Women Are from Venus
- ড. আলবার্ট এম. ক্লার্ক – Sexual Health in Traditional and Modern Medicine
এই বইগুলোতে স্বপ্নদোষের কারণ, প্রতিকার এবং এর স্বাস্থ্যগত প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
2 thoughts on “স্বপ্নদোষ কাকে বলে কি কারনে স্বপ্নের দোষ হয়”