Best Homeopathic Treatment

সেপটিক জ্বর

সেপটিক জ্বর

সেপটিক জ্বর কাকে বলে উহার কারণ কি উহার চিকিৎসা ও প্রতিকার

সেপটিক জ্বর কাকে বলে উহার কারণ কি উহার চিকিৎসা ও প্রতিকার

সেপটিক জ্বর: হোমিওপ্যাথি ও অন্যান্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ

সেপটিক জ্বর (Septic Fever) একটি গুরুতর সংক্রমণজনিত অবস্থা, যা মূলত সেপসিস (Sepsis) থেকে উদ্ভূত হয়। এটি তখনই ঘটে যখন শরীরের সংক্রমণ প্রতিরোধের প্রক্রিয়া অতিরিক্ত মাত্রায় সক্রিয় হয়ে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আঘাত করে। হোমিওপ্যাথি ও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, সেপটিক জ্বর একটি জটিল সমস্যা, যা দ্রুত চিকিৎসা না করালে প্রাণঘাতী হতে পারে। এখানে সেপটিক জ্বরের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার আলোচনা করা হবে।

সেপটিক জ্বরের কারণ

সেপটিক জ্বরের মূল কারণ হলো সেপসিস, যা বিভিন্ন জীবাণুর সংক্রমণের ফলে ঘটে থাকে। মূলত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ফাঙ্গাসের সংক্রমণ থেকে এই অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।

সেপসিসের কিছু প্রধান কারণ:

  1. ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ: যেমন ফুসফুসের সংক্রমণ (নিউমোনিয়া), মূত্রনালির সংক্রমণ (ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন) এবং রক্তের সংক্রমণ (ব্লাডস্ট্রিম ইনফেকশন)।
  2. অভ্যন্তরীণ ইনফেকশন: যেমন পেটের ইনফেকশন বা সার্জারির পর ইনফেকশন।
  3. জখম বা পোড়া ক্ষত: সংক্রমিত ক্ষত বা পোড়ার কারণে সেপসিস হতে পারে।
  4. অন্ত্রের ফুটো বা সংক্রমণ: অন্ত্রের ফুটো বা সংক্রমণ হলে এটি রক্তে জীবাণু প্রবেশের সুযোগ করে দেয়।

সেপটিক জ্বরের লক্ষণ

সেপটিক জ্বরের সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • উচ্চ তাপমাত্রা (জ্বর ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তারও বেশি হতে পারে)।
  • অতিরিক্ত শীতলতা ও কাঁপুনি।
  • দ্রুত হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস।
  • ক্লান্তি, দুর্বলতা, ও মাথাব্যথা।
  • মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস পাওয়া।
  • প্রস্রাবের পরিমাণ হ্রাস।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

হোমিওপ্যাথি বিশ্বাস করে যে, দেহের নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যবস্থা কার্যকরভাবে জীবাণুদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগীর সমগ্র শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে ওষুধ নির্বাচন করা হয়।

কিছু সাধারণ হোমিওপ্যাথিক ওষুধ যা সেপটিক জ্বরের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে:

  • Pyrogenium: সেপটিক কন্ডিশনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ হিসেবে বিবেচিত হয়। উচ্চ জ্বর ও শীতকাঁপুনির জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • Arsenicum Album: শরীরে গুরুতর দুর্বলতা ও অত্যধিক শীতের অনুভূতির জন্য এটি কার্যকর।
  • Baptisia: সংক্রমণের কারণে যদি রোগীর শরীরে বিষক্রিয়ার লক্ষণ থাকে তবে এই ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
  • Lachesis: রক্তে বিষক্রিয়ার কারণে রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে এটি ব্যবহৃত হয়।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মূল বৈশিষ্ট্য হলো এটি রোগীর সমগ্র শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে ওষুধ নির্ধারণ করে এবং প্রতিক্রিয়া মনিটরিং করে।

অন্যান্য চিকিৎসা (আধুনিক চিকিৎসা)

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, সেপটিক জ্বরের জন্য অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন। সাধারণত, সংক্রমণ প্রতিরোধে অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য ওষুধ দেওয়া হয়। সঠিক ওষুধ নির্ধারণের জন্য সংক্রমণের উৎস এবং জীবাণু নির্ধারণ করা হয়।

প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে:

  1. অ্যান্টিবায়োটিক: জীবাণুর সংক্রমণ নিরাময়ের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা।
  2. আইভি ফ্লুইড: রক্তচাপ ও রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখতে।
  3. অক্সিজেন: শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা থাকলে প্রয়োজনে অক্সিজেন থেরাপি।
  4. সার্জারি: কোনো সংক্রমিত অংশ অপসারণ বা সেপসিস নিরাময়ের জন্য।

প্রতিকার

সেপটিক জ্বর প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:

  1. সঠিক সময়ে সংক্রমণের চিকিৎসা: সংক্রমণ শুরু হলে দ্রুত চিকিৎসা করানো উচিত।
  2. স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা: সঠিক হাত ধোয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন।
  3. টিকা নেওয়া: নির্দিষ্ট সংক্রমণ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন গ্রহণ।
  4. ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করা: সুষম খাদ্য ও ব্যায়াম ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।

বইয়ের রেফারেন্স

  • Boericke, W. (1927). Pocket Manual of Homeopathic Materia Medica. Boericke & Tafel.
  • Hahnemann, S. (1833). The Chronic Diseases, Their Peculiar Nature and Their Homeopathic Cure. Jain Publishing Co.