Best Homeopathic Treatment

সুস্থ ও অসুস্থ অবস্থায় জীবনী শক্তির কাজ কি

জীবনী শক্তির কাজ

রোগ ও আরোগ্যে জীবনী শক্তির ভূমিকা বা সুস্থ ও অসুস্থ অবস্থায় জীবনী শক্তির কাজ কি

রোগ ও আরোগ্যে জীবনী শক্তির ভূমিকা

হোমিওপ্যাথির মূল ভিত্তি হলো “জীবনী শক্তি” বা “ভাইটাল ফোর্স”, যা মানব দেহের ভেতরে অদৃশ্য শক্তি হিসেবে কাজ করে। জীবনী শক্তির ভারসাম্যই দেহকে সুস্থ রাখে এবং এই শক্তির অপব্যবস্থায় দেহে রোগ সৃষ্টি হয়। রোগের প্রাথমিক কারণ হিসেবে জীবনী শক্তির অসামঞ্জস্যকে চিহ্নিত করা হয় এবং হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই শক্তিকে সঠিক অবস্থায় ফেরানোই মূল লক্ষ্য।

জীবনী শক্তির ভূমিকা রোগে

হোমিওপ্যাথির প্রতিষ্ঠাতা স্যামুয়েল হানিম্যানের মতে, রোগ মূলত জীবনী শক্তির অভ্যন্তরীণ বিকৃতির ফল। যখন এই শক্তি তার স্বাভাবিক গতিপথে ব্যাঘাত ঘটে, তখন দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, যার ফলে বাহ্যিক লক্ষণগুলো (যেমন: জ্বর, ব্যথা, ক্লান্তি ইত্যাদি) দেখা দেয়। এটি কেবল শারীরিক নয়, মানসিক অসুস্থতাও জীবনী শক্তির ভারসাম্যহীনতার সাথে সম্পর্কিত।

অন্যদিকে, জীবনী শক্তি দুর্বল হলে, শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। তাই হোমিওপ্যাথির চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হলো জীবনী শক্তির স্বাভাবিক অবস্থান ফিরিয়ে আনা।

জীবনী শক্তির ভূমিকা সুস্থতায়

জীবনী শক্তি সুস্থ অবস্থায় শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সকল প্রকার রোগের বিরুদ্ধে রক্ষাকারী হিসেবে কাজ করে। যখন এই শক্তি সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় থাকে, তখন দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করে এবং মানসিক শান্তি বজায় থাকে। জীবনী শক্তির ভারসাম্য থাকলে শরীর সহজে রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। এ কারণেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা প্রতিটি ব্যক্তির জীবনী শক্তির প্রকৃতি অনুযায়ী ভিন্ন হয়।

যেমন, একটি ছোট মাত্রার আঘাত বা মানসিক চাপ জীবনী শক্তিকে সাময়িকভাবে দুর্বল করতে পারে, কিন্তু এটি দ্রুত পুনরুদ্ধারও করতে পারে যদি শক্তির প্রাকৃতিক ক্ষমতা ঠিক থাকে।

অসুস্থ অবস্থায় জীবনী শক্তির কাজ

যখন জীবনী শক্তির ভারসাম্যহীনতা ঘটে, তখন দেহে নানা প্রকার অসুস্থতা দেখা দেয়। এই অবস্থায়, রোগী শুধু বাহ্যিক লক্ষণগুলোর চিকিৎসা করলে পুরোপুরি সুস্থ হয় না। হোমিওপ্যাথিক মতে, প্রকৃত নিরাময় সম্ভব তখনই যখন জীবনী শক্তি পুনরায় সক্রিয় হয়ে তার আসল ভারসাম্য ফিরে পায়।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে, ওষুধগুলো জীবনী শক্তির সঙ্গে কাজ করে এবং তাকে উদ্দীপিত করে, যেন দেহ তার নিজস্ব ক্ষমতায় রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময় করতে পারে।

রোগ নিরাময়ে জীবনী শক্তির ভূমিকা

হোমিওপ্যাথির মতে, রোগ নিরাময় তখনই ঘটে যখন জীবনী শক্তি তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো রোগের ক্ষেত্রে বাহ্যিক উপসর্গের পরিবর্তে জীবনী শক্তির পুনর্বিন্যাস করলে দেহ সুস্থ হয়ে ওঠে। এটি কেবল শারীরিক নয়, মানসিক রোগেও প্রযোজ্য। হোমিওপ্যাথিক ওষুধের মাধ্যমে জীবনী শক্তির কার্যক্রমকে পুনঃস্থাপন করা যায়, যা রোগীর পূর্ণ সুস্থতা নিশ্চিত করে।

উপসংহার

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় জীবনী শক্তি রোগ নিরাময়ের কেন্দ্রীয় উপাদান। সুস্থ অবস্থায় এই শক্তি দেহকে নিয়মিতভাবে চালিত করে এবং রোগ প্রতিরোধ করে। কিন্তু অসুস্থ অবস্থায় এই শক্তি দুর্বল হলে দেহ তার প্রাকৃতিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তাই, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা এই জীবনী শক্তির ভারসাম্য ফিরিয়ে এনে রোগীকে সুস্থ করে তুলতে কাজ করে।

রেফারেন্স

১. হানিম্যান, স্যামুয়েল. অর্গানন অফ মেডিসিন, ৬ষ্ঠ সংস্করণ, ১৮৪২। ২. মণ্ডল, ড. জয়দীপ. হোমিওপ্যাথিক রোগ নিরাময়, কলকাতা: বিশ্বভারতী প্রকাশনী, ২০১৫।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *